উত্তর প্রদেশে আবারও গো-রক্ষকদের তৎপরতা, পেটানো হলো মুসলিম ব্যবসায়ীকে

মাংস পরিবহন ও বিক্রির ব্যবসায় যুক্ত ভারতের উত্তর প্রদেশের এক মুসলমান ব্যক্তিকে পেটানো হয়েছে। নিজেকে গো-রক্ষক দাবি করা এক ব্যক্তির নেতৃত্বাধীন একটি দল মোহাম্মদ শাকির নামের ওই ব্যক্তিকে পেটায়। গত রবিবার রাজ্যের মোরাদাবাদ জেলায় এই ঘটনার পর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন শাকিরের ভাই। হামলাকারীরাও শাকিরের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেছে। সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গো-রক্ষার নামে মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যার শুরু করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। হিন্দুদের কাছে গরু পবিত্র। গো-রক্ষকরা ভারতে গরু জবাই ও গরুর মাংস খাওয়ার বিরোধিতা করে আসছে। ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে গরু জবাই ও গরুর মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। করছে  দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক সমালোচনার মুখেও নীরব ছিলেন মোদি। অবশেষে ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদের গো-রক্ষকদের হুঁশিয়ার করে দেন মোদি। বেশ কিছু দিন গো-রক্ষকদের তাণ্ডবের কথা প্রকাশ্যে আসা বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি আবারও সামনে এসেছে উত্তর প্রদেশে মুসলিম নির্যাতনের তথ্য।

গত রবিবার বিকেলে মোহাম্মদ শাকিরকে পেটানোর পর যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাতে তার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে প্রাণী হত্যা, সংক্রমণ ছড়ানোর কার্যক্রম এবং কোভিড লকডাউনের নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ওই অঞ্চলে কর্মরত পুলিশের এক ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট এনডিটিভিকে জানান, শাকিরকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো কিন্তু কারাগারে পাঠানো হয়নি কেননা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ জামিনযোগ্য। শাকিরের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বর্তমানে বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি।

তবে শাকিরের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেওয়া মনোজ ঠাকুরকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে আর বাকি দুই জন পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে মোরাদাবাদ পুলিশ। জেলা পুলিশ প্রধান প্রভাকর চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মাংস বিক্রেতাকে পেটানোর একটি ভিডিও পেয়েছি আর একটি মামলা দায়ের করেছি। নাম-ছয় জন অভিযুক্তের নাম পেয়েছি। তাদের খোঁজা অব্যাহত রেখেছি আর শিগগিরই গ্রেফতার করবো।’

পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে শাকিরের ভাই জানিয়েছেন, স্কুটারে করে ৫০ কেজি মহিষের মাংস বহনের সময় তাকে থামায় মনোজ ঠাকুর ও তার সঙ্গিরা। মামলায় বলা হয়েছে, গো-রক্ষকেরা শাকিরের কাছে ৫০ হাজার রুপি দাবি করে পেটায়। পেটানোর পর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে হুঁশিয়ার করা হয় তাকে।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা ছবিতে দেখা গেছে, শাকিরকে ঘিরে রেখেছে মনোজ ঠাকুর ও তার সঙ্গীরা। পরে মনোজ লাঠি দিয়ে শাকিরকে পেটালে সে মাটিতে পড়ে যায়। হামলাকারীদের খোঁজে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রাখলেও অজ্ঞাত স্থান থেকে এক বিবৃতি পাঠিয়েছেন মনোজ।

স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া বিবৃতিতে মনোজ ঠাকুর বলেন, আমরা এই লোককে থামানো চেষ্টা করি কিন্তু সে আমাদের গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দেয়। একজনকে পেটাতে দুটি লাঠির ব্যবহার অপরাধ কিন্তু কাউকে হত্যার চেষ্টা তা নয়? আমি গো-হত্যাকারীকে থামানোর চেষ্টা করি কিন্তু এখন পুলিশ আমাকে হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসন আমাকে একটি পুলিশের দল দিক... আমি এই চক্র উন্মোচন করবো।’