ইয়াসে কলকাতা বেঁচে গেলেও ব্যাপক ক্ষতি দীঘায়

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শেষ। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে চলে ল্যান্ডফল। দূরত্বের জেরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব থেকে বেঁচে গেছে কলকাতা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী ৩ ঘণ্টা পর থেকে ক্রমশ শক্তি হারাবে প্রবল শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়। তবে, ইয়াসের জেরে এদিন কলকাতাসহ সংলগ্ন জেলাগুলোতে বৃষ্টি চলবে। পূর্বাভাস আগামীকাল প্রবল বৃষ্টি হবে ঝাড়খণ্ডে।

এদিন নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘন্টা আগে সকাল ৯টা নাগাদ স্থলভাগে আছড়ে পড়ে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। মৌসুম ভবন বুধবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের বুলেটিনে জানায়, উড়িষ্যার বালেশ্বরের দক্ষিণে ইয়াসের ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই সময় ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিমি।

ইয়াসের জেরে উত্তাল রয়েছে দীঘার সমুদ্র। পূর্ণিমার ভরা কোটালের জেরে সামুদ্রিক জলচ্ছ্বাস দেখা যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে। এই দুই জেলায় গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত ছিল প্রশাসনও। পশ্চিমবঙ্গ এবং উড়িষ্যার উপকূলবর্তী এলাকায় লাল সতর্কতা জারি হয়। বাংলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পরার আগেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১০ জেলায় নামানো হয় সেনা।বাড়ির ছাদে আশ্রয় নেয় মানুষ

মঙ্গলবার সারারাত নবান্ন থেকেই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন বলেছেন, ‘উপকূলবর্তী এলাকায় গ্রামগুলিতে জল ঢুকছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ৫১টি নদীবাঁধ ভেঙেছে। গোসাবার গ্রামগুলি প্লাবিত। ২০ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীঘা, শংকরপুর এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নন্দীগ্রামে গ্রামের পর গ্রাম ডুবে গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরানো হয়েছে। ১৫ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরানো হয়েছে’। সকলকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘ভরা কোটালের জন্য বাংলায় বেশি সমস্যা হচ্ছে। যতক্ষণ না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, ততক্ষণ কেউ প্লাবিত গ্রামে ফিরবেন না।’

ইয়াসের দাপটে তছনছ অবস্থা দীঘার। সমুদ্রের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। তীব্র গতিতে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। উত্তাল সমুদ্রের জল গার্ডওয়াল টপকে ঢুকছে রাস্তায়। রাস্তা টপকে হোটেলেও ঢুকেছে জল। ডুবে গিয়েছে সমুদ্র সংলগ্ন দোকানগুলিও। প্লাবিত মন্দারমনি, তাজপুরও। ডুবে যায় রাস্তার উপর দাঁড় করানো মোটরবাইক, গাড়ি। এই অবস্থায় সমুদ্র তীরবর্তী ও লোকালয়ে সেনা নামিয়ে চলছে উদ্ধারকাজ।

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা

মন্দারমণিতে বীভৎস প্রভাব পড়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের। অধিকাংশ হোটেলগুলিতে জল ঢুকেছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত গ্রাম। তীব্র ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে যায় বাড়ির চাল,  লোকালয়। বিপর্যয় মোকাবিলা দল ও সেনা নামিয়ে চলছে উদ্ধারকাজ।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সব মিলিয়ে ৫১টি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকায় ৭০ কিলোমিটার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বুধবার নবান্নে এই পরিসংখ্যান দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তবে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে প্রশাসন তৎপর বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সতর্ক করা হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে।