আফগানিস্তানে তালেবানের ক্রমাগত হামলা ও ভূখণ্ড দখল ভারতের জন্য শাঁখের করাত হয়ে উঠেছে- এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা। রবিবার (১৮ জুলাই) পত্রিকাটির ডিজিটাল সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, এক মাস আগে প্রকাশ্যে আসে যে তালেবানের সঙ্গে গোপনে ও নিঃশব্দে একটি আলোচনার দরজা খুলেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই পদক্ষেপের সমর্থনে বলা হয়েছিল, পাকিস্তানকে আফগানিস্তান তথা দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার সন্ত্রাসমঞ্চ থেকে দূরে রাখতেই এ উদ্যোগ। কিন্তু এখন তালেবানের এই মাত্রাছাড়া সহিংসতার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় দেখাচ্ছে নয়াদিল্লিকে। ভারতীয় ফটোসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি কান্দাহারে সংঘর্ষে নিহত হওয়ায় এখন আরও চাপে সাউথ ব্লক।
একদিকে আফগানিস্তান সরকারের পক্ষে ভারতের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে, তালেবানকে মূলস্রোতে ফেরার জন্য তাদের সঙ্গে নয়াদিল্লি কথা বলুক। অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাবুল পরিস্থিতি নিয়ে নয়াদিল্লির মতান্তর প্রকট হচ্ছে। ভারত এখন তালেবানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে গিয়ে বোঝালো এবং তারা সেটাকে গুরুত্ব দেবে—এটা অবাস্তব। কারণ, তালেবান যে পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট সন্ত্রাসগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করছে এবং এই উগ্র সন্ত্রাসের পিছনে ইসলামাবাদের সমর্থন রয়েছে, এটাও ক্রমশ বুঝতে পারছে ভারত। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে ব্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে এখন নাক গলাতে চায় না। ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা অথবা তালেবানের কারণে কাশ্মিরে আন্তসীমান্ত সন্ত্রাস বৃদ্ধি নিয়ে তাদের মাথাব্যথা আদৌ দেখা যাচ্ছে না।
গত সপ্তাহে রাশিয়ায় গিয়ে আফগানিস্তান প্রশ্নে মতবিরোধ হয়েছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের। রাশিয়া স্পষ্ট জানায়, তালেবান তাদের আশ্বস্ত করেছে সন্ত্রাস তাদের দেশের বাইরে গড়াবে না। তাই এ নিয়ে অহেতুক মাথা ঘামাতে চায় না মস্কো। জয়শঙ্কর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে না গিয়ে, সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেওয়া ভয়ংকর হতে পারে।
কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি ব্রিটেনের পক্ষ থেকেও ভারতকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তালেবান ক্ষমতায় এলে তাদের স্বীকৃতি দিতে সমস্যা নেই। ভারতের ধারণা, আফগান-পাকিস্তান নীতির ক্ষেত্রে ব্রিটেনের সমর্থন রয়েছে পুরোপুরি ইসলামাবাদের দিকেই, যা ভারতের পক্ষে খুবই চাপের। ব্রিটেন মনে করে, আফগান-পাকিস্তান অঞ্চলের নিরাপত্তা বহাল রাখতে তাদের ভূকৌশলগত অবস্থানের জন্য পাকিস্তান সব চেয়ে কার্যকর। আর সে কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে ব্রিটিশ সেনা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে, যা আফগানিস্তানে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে আরও বেড়েছে।
সম্প্রতি একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, তালেবান ক্ষমতায় এলে ব্রিটেন তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা করবে।
সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তালেবানের বাড়বাড়ন্তে ভারতের ঝুঁকি নিয়ে ভাবার মতো কেউ পাশে নেই নয়াদিল্লির, এটাই এখন আক্ষেপ ভারতীয় কূটনীতিকদের।