পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির আচরণে ক্ষুব্ধ এনডিএ জোটের শরিকরা

ভারতজুড়ে একসঙ্গে লড়াই করা যায়, আসন ভাগাভাগি করা যায়। শুধু পশ্চিমবঙ্গে ব্যতিক্রম। এনডিএ জোটের চার শরিকদের রাজ্যের রাজনীতিতে পাত্তাই দেয় না বঙ্গ বিজেপি। এমনই অভিযোগ করছে এনডিএ জোটে থাকা বাংলার লোকজনশক্তি পার্টি, আরপিআই, জেডিউই আর হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা। সর্বশেষ বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে জোট শরিকদের সঙ্গে নিয়ে লড়াই না করার মাসুল গুনতে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিকে। রাজ্যের একাধিক আসনে কোথাও শাসকদল তৃণমূলকে সমর্থন আবার কোথাও নিজেরা প্রার্থী দিয়ে বিজেপি বিরুদ্ধে প্রচার করেছে ক্ষুব্ধ শরিকরা।

এনডিএ শরিকদের প্রতি পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির উদাসীন মনোভাবের কারণে একুশে জোট হয়নি বলে দাবি করেন আরপিআই দলের রাজ্য সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় মল্লিক। তিনি বলেন, ‘বিধানসভা ভোটের আগে জোট করতে চেয়ে আমি দিলীপ ঘোষ এবং মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমাদের দলের সভাপতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আঠাওলেজি কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে কথা বলেন। কোনও লাভ হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি শরিকদের পাত্তাই দেয় না। বাধ্য হয়ে আমরা বিধানসভায় প্রার্থী দেই। যেখানে প্রার্থী দিতে পারিনি সেখানে ক্ষোভের কারণেই আমরা তৃণমূলকে সমর্থন করি। ছোট হলেও আমরা তো একটা রাজনৈতিক দল। আমাদের আত্মসম্মান নেই?’

বিহারে এনডিএ জোটের শরিক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জিতেন রাম মাঝির দল হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার রাজ্য সভাপতি শতদ্রু রায় বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে লড়াই করার জন্য বঙ্গ বিজেপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু কোনও সাড়া পাইনি। বাধ্য হয়ে প্রার্থী দাঁড় করাই আমরা। আমরা যাই ভোট পাই না কেন, জোট হলে সেটা বিজেপির পক্ষেই যেত।’

‘বড় ভাই’ বিজেপি চায় না

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের দল জনতা দল ইউনাইটেডের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক সভাপতি বর্তমানে কেন্দ্রীয় কর্মসমিতির সদস্য অশোক দাস অভিযোগ করে বলেন, “বাংলায় এনডিএ জোট গড়ে না উঠার কারণ হলো, বড় ভাই বিজেপি যদি আগ্রহ না দেখায় তাহলে আমরা কী করব? একবার দিলীপ ঘোষ এনডিএ জোট নিয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘বাংলায় আমাদের কাউকে দরকার নেই। আমরাই সর্বেসর্বা’। এই যে অহমিকা। আমরা কী জোটের কথা বলতে গিয়ে ঘাড়ধাক্কা খাব? তারপরেও বলছি আমরা চাই বাংলায় এনডিএ জোট হোক। কিন্তু তার জন্য পরিবেশ বিজেপিকেই তৈরি করতে হবে।’

লোকজনশক্তি পার্টির রাজ্য সভাপতি জয় রায় বলেন, ‘বড় ভাই যদি হাত না বাড়ায় কী করে সর্ম্পক হবে? ভোটের আগে দিলীপদার সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। উনি বললেন, আমাদের সমর্থন করুন। একসঙ্গে কাজ করতে বললেন না। এটা কী জোটের বৈশিষ্ট্য?’

আসন্ন উপনির্বাচনগুলো এবং পরবর্তীতে পৌরসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটে এনডিএ জোট শরিকদের সঙ্গে নিলে বিজেপি লাভই হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শরিক দলগুলো যতই ছোট হোক না কেন বিধানসভা, পৌরসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে সামান্য ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে এই ছোটদলগুলো ভোট ব্যাংক নিজেদের পক্ষে আনতে পারলে আখেরে বিজেপিরই আসন সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে।