কংগ্রেসকে ভরসা করতে নারাজ মমতা

ইঙ্গিত আগেই ছিল। ভারতজুড়ে বিজেপিবিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না তৃণমূল। সোমবার এমনটাই স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোয়া সফরে গিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলগুলো নিয়ে ভারতজুড়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানানোর পর এদিন তাঁর এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন তুলেছে।

বেশ কয়েক দিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চব্বিশের লোকসভা ভোটে ভারতজুড়ে বিজেপি বিরোধী সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিরোধী দলগুলোর ঐক্য নিয়ে তিনি অন্য রাজ্যের একাধিক বিজেপিবিরোধী আঞ্চলিক দলের নেতার সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন। কংগ্রেস নয়, এই জোটের নেতৃত্বের রাশ থাকা উচিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। এমনটাও বলা হয়েছে তৃণমূলের পক্ষ থেকেও। অন্যদিকে, গোয়া সফরে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল এককভাবে নয়। গোয়ার বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে বিজেপিবিরোধী জোট করতে চান তারা।

এদিন জানবাজারে কালীপুজো উদ্বোধন করেন মমতা। সেখানেই তিনি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে স্পষ্টতই অভিযোগ করেছেন, বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে সমঝোতা রয়েছে।

মমতা অতীতে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোটের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছিল কংগ্রেস। গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছিল কংগ্রেস। সেই কারণেই কংগ্রেসের জোট ছাড়তে হয়েছিল। কংগ্রেসের ওপর নির্ভর করা যায় না।’ তাঁর দাবি, ‘আমরা চাই না ভোট ভাগাভাগি হোক। বিজেপি-কংগ্রেস একে অপরের সঙ্গে সমঝোতা করছে।’

এর আগে গোয়ায় কংগ্রেসের হাইকমান্ডের দিকে প্রশ্ন তুলে মমতা বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের বলতে পারেন আপনি কেন লড়াই করছেন। কংগ্রেস লড়াই করুক। তারা ৭০ বছর ধরে লড়াই করেছে, তারা কী করেছে? গতবার কংগ্রেস বিধায়করা তাদের সরকার গঠনে সহায়তা করতে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। আপনার বিধায়কদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। আপনি সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। আপনি বিজেপিকে সরকার গঠনের অনুমতি দিয়েছেন। কে বলতে পারে এর পুনরাবৃত্তি হবে না। আমরা কীভাবে তাদের বিশ্বাস করবো?’

তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা এগিয়ে আসতে পারেনি। আমার রাজ্যে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, আর আমরা অন্য রাজ্যে গিয়ে সমর্থন করে চলে আসবো, এটা হয় নাকি! আমরা কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে চলবো বলেই ২০১১ সালে জোট করেছিলাম। কিন্তু ওরা লাগাতার পেট্রোপণ্যের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছিল। তাতে মানুষের অসুবিধা হচ্ছিল। তাই ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। কাউকে তো এগোতেই হবে।’

এদিন বিজেপির সঙ্গে আঁতাত রয়েছে বলেও তোপ দাগেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আমি গোয়ায় গেলাম, আমাকে কালো পতাকা দেখাতে এলো কয়েকজন মূর্তিমান। আমি নমস্কার জানিয়েছি। কারণ, দুদিন বাদে জনতা ওদের ব্ল্যাকলিস্ট করে দেবে। আমার পর কংগ্রেসের আরেক নেতা তো গেলো বিশাল কনভয় নিয়ে। সেখানেও হোর্ডিং ছিল, ব্যানার ছিল। কই, তাকে তো কিছু বলা হলো না। কংগ্রেস কোন লড়াইটা করেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। বরং সিপিআইএমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। যাঁরা ওদের চিরশত্রু।’

তৃণমূলের অভিযোগ, উত্তর প্রদেশ থেকে ত্রিপুরা, অসম সবখানেই প্রচার গেলে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে মমতা, অভিষেক থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। গোয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টারে কালো রঙ লাগানো হয়েছিল। কালো পতাকা দেখানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে। অথচ কংগ্রেসের সঙ্গে এমনটা হচ্ছে না। মমতার গোয়া সফরের সময় রাহুল গান্ধীও সেখানে ছিলেন। যদিও দুই নেতৃত্বের দেখা হয়নি। কিন্তু রাহুল বা কংগ্রেসের তরফে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে যে বিক্ষোভ করা হয়েছে তা নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপিবিরোধী জোট গড়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্বের ফাটল ক্রমশই চওড়া হচ্ছে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।