কলকাতার পৌর ভোটে কেরালার ছায়া!

এবার কেরালার ছায়া কলকাতার পৌর ভোটে! বামফ্রন্টের আসন বণ্টন সমঝোতার সূত্র ভেঙে আরএসপির জন্য বরাদ্দ ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। আর যা নিয়ে ফের বামফ্রন্টে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তাদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়ায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ বাম শরিক আরএসপি।

পৌর ভোটে প্রথম প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল বামফ্রন্ট। তালিকায় দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর বিধানসভার অন্তর্গত ১০৪ ও ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে কোনও প্রার্থীর নাম ছিল না। বলা হয়েছিল, এই দুটি ওয়ার্ডের প্রার্থী নিয়ে আলোচনা চলছে। বামফ্রন্টের আসন বণ্টন সূত্র অনুসারে বরাবরই দুটি ওয়ার্ডে জোট মিত্র আরএসপির প্রার্থীই টিকিট পান। কিন্তু পরে দেখা গেলা এই ওয়ার্ডে আরএসপি ও সিপিএম উভয়েই প্রার্থী দিয়েছে। ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডে আরএসপির ধীরাজ গঙ্গোপাধ্যায় ও সিপিএমের রানা ভট্টাচার্য। একইভাবে ১০৬ ওয়ার্ডে আরএসপির হয়ে অলোক চট্টোপাধ্যায় ও সিপিএমের হয়ে দীপঙ্কর মণ্ডল। যা নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক চাপান-উতোর।

যদিও ভারতে এই ঘটনা নতুন নয়। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা বাদে সেভাবে কোথাও বামফ্রন্টের অস্তিত্ব নেই। বামদের শেষ ঘাঁটি বলে পরিচিত কেরালায় দীর্ঘদিন ধরেই সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ ফ্রন্টের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টে রয়েছে আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক। শুধু তাই নয়, কোল্লাম লোকসভা আসনে ২০১৪ সাল থেকে আরএসপির এনকে প্রেমচন্দন সিপিএম প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত হচ্ছেন।

বিষয়টি নিয়ে আরএসপি প্রার্থী অলোক চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘১০৬ ওয়ার্ড ও ১০৪ বরাবরই আমাদের ছিল। সেভাবেই আমি ও ধীরাজ মনোনয়ন দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে তারা দাবি করছে, আসন দুটি তাদের ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু আমাদের পক্ষে এই দাবি মানা অসম্ভব। আরএসপির রাজ্য কমিটির অনুমোদন পেয়ে আমরা দাঁড়িয়েছি। আমরা এখনও চেষ্টা করছি। যাতে সিপিএম প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ওরা আমাদের বিরুদ্ধে ১০৪-এ প্রার্থী প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু আমার ওয়ার্ডে সেই উদ্যোগ নেই সিপিএমের। তাই বামভোট ভাগ হবে। তৃণমূলের সুবিধা হবে।’

যদিও আরএসপির প্রার্থীর এই দাবি মানতে নারাজ ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী দীপঙ্কর মণ্ডল। তার দাবি, ‘শুধু আমাদের দলের নয়, এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এখানে সিপিএম দাঁড়াক। এখানে আরএসপিকে টিকিট দেওয়ার মানে হলো ওয়ার্ডটা তৃণমূলের হাতে ফের তুলে দেওয়া। এর আগে আরএসপির ঝর্ণা মণ্ডলের হয়ে লড়াই করেছি। তিনি এখন তৃণমূলে চলে গেছেন। এবার আরএসপির যিনি প্রার্থী হয়েছেন তিনি কোনও দিন মানুষের পাশে ছিলেন না। তিনি ভাবছেন, বামফ্রন্টের ফর্মুলা মেনে তিনি দাঁড়াবেন। কিন্তু আমাদের দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরাই লড়বো। আর উনি প্রচার করছেন আরএসপির প্রার্থী হয়ে। আর আমি বামফ্রন্ট সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী হিসেবে প্রচার করছি। উনি কেন বামফ্রন্ট প্রার্থী বলে প্রচার করছেন না?’

দীপঙ্কর বলেন, ‘১০৪ নম্বর ওয়ার্ডে আমরা সিপিএম প্রার্থী তুলে নিয়েছি বামফ্রন্টের সিদ্ধান্ত মেনে। পাড়ার লোকজন ও স্থানীয় বামফ্রন্ট থেকে অলোকবাবুকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। এই ওয়ার্ডে পর পর চারবার আরএসপির কারণে তৃণমূল ওয়াকওভার পেয়েছে। এবার সেটা হবে না।’

বিষয়টি হাস্যকর বলে দাবি করছেন এই ওয়ার্ডের সাবেক সিপিএম নেতা ও বর্তমানে বিজেপি তপশিলি মোর্চার রাজ্যনেতা গোবিন্দ দাস। তিনি বলেন, ‘আর কত খেলা দেখাবে সিপিএম। ভোট ভাগ করে তৃণমূলকে জিতিয়ে দিতে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে। আমি সিপিএমে থাকার সময় কেরালা নিয়ে প্রশ্ন করতাম। পশ্চিমবঙ্গে আমরা এক, অথচ কেরালায় কেন আরএসপি আমাদের বিরুদ্ধে? সিপিএম নেতারা বলতেন, পশ্চিমবঙ্গ আর কেরালা এক নয়। আসলে চিরকালই বামপন্থীরা দ্বিচারি। যখন যেমন, তখন তেমন। ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার জন্য এদের কোনও নীতি-আদর্শ নেই। তা আবারও প্রমাণ হলো এই ঘটনায়।’