পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নেই: রাজ্যপাল ধনখড়

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় ভারতের সংবিধান রচয়িতা বি আর অম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তবে সেখানে মাল্যদান করতে গিয়ে নজিরবিহীনভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নেই বলেও সরব হন রাজ্যপাল। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংবিধান সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

রাজ্যপালের এমন আচরণ অসৌজন্যমূলক বলে পাল্টা মন্তব্য করেছেন বিধানসভার স্পিকার।

মঙ্গলবার ভারতের জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে বিধানসভায় গিয়ে অম্বেদকরের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানানোর সিদ্ধান্ত নেন রাজ্যপাল। সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। অম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদানের পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন রাজ্যপাল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আপনি সংবিধান বোঝেনই না। সংবিধান মেনে চলা আপনার সাংবিধানিক দায়িত্ব। আমার দায়িত্ব যাতে সংবিধান রক্ষা করা হয়। কিন্তু তা হচ্ছে না।’

রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও সরব হন রাজ্যপাল। অভিযোগ করেন, রাজ্যে গণতান্ত্রিক কোনও পরিবেশই নেই।

এদিন রাজ্য বিধানসভার স্পিকারকেও তীব্র আক্রমণ করেন রাজ্যপাল। বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘স্পিকার মনে করেন তিনি রাজ্যপাল সম্পর্কে যা কিছু বলতে পারেন। ওনার কাছে কোনও তথ্য চাইলেই পাওয়া যায় না। উনি মনে হয় জানেন না যে, সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালই বিধানসভায় সর্বোচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তি। দ্বিতীয় স্থানে থাকেন স্পিকার।’

বিধানসভার অধ্যক্ষের দিকে ইঙ্গিত করে রাজ্যপালের আরও অভিযোগ, হাওড়া পৌরসভার বিলে সই না করা নিয়ে তার নামে মিথ্যা রটানো হচ্ছে। তার কাছে হাওড়া পৌরসভা বিল সংক্রান্ত কোনও ফাইলই নেই।

রাজ্যপাল যখন এসব অভিযোগ করেন তখন তার পেছনেই দাঁড়িয়েছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালকে পাল্টা তোপ দেগে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক আচরণ। উনি ওনার এখতিয়ার মেনে কাজ করবেন, আমি আমার এখতিয়ার মেনে করবো। ওনার কিছু বলার থাকলে রাজভবনে সাংবাদিকদের ডেকে বলতে পারতেন।’

বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘এর আগে অনেক রাজ্যপাল রাজ্যে এসেছেন। তাদের কেউ এই ধরনের মন্তব্য করেননি। উনি কার মুখপাত্র হয়ে কাজ করছেন, সেটা বুঝতে পারছি না।’

এদিন যে অভিযোগগুলো নিয়ে রাজ্যপাল সরব হয়েছেন, সেগুলো নিয়ে অতীতেও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তিনি। কিন্তু যেভাবে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে জগদীপ ধনখড় মুখ্যমন্ত্রীসহ গোটা রাজ্য সরকারকে তোপ দাগলেন, তাতে তার সঙ্গে রাজ্যের সংঘাত আরও তীব্র আকার ধারণ করলো। এদিনের ঘটনায় স্বভাবতই রাজ্যপালকে তীব্র আক্রমণ করেছে তৃণমূল নেতারা। তবে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ বিজেপি নেতারা।