শান্তিনিকেতনে ভেঙেছে বাংলাদেশ ভবনের ছাদের একাংশ, খসে পড়ছে পলেস্তারা

করুণ অবস্থা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ ভবনের। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে পড়েছে ভবনের ছাদের নিচের একাংশ। একাধিক জায়গায় খসে পড়ছে পলেস্তারা। পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক, ওই ছাদের নিচে কেউ থাকলে তার মাথায় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

২০১৮ সালের ২৫ মে এই ভবন উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। তৈরির সময় থেকে এই ভবনের পরিকাঠামো এবং নকশা নিয়ে একাধিক বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। শান্তিনিকেতনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের সব থেকে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ  ভবন। করোনাকালে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে এই ভবনে। মূলত বিশ্বভারতীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে এই ভবনে।

শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবন

বাংলাদেশ ভবনের প্রবেশ পথের বাইরে থেকে দেখা গেছে, ভবনের বাইরে দিকে যে ছাদ রয়েছে তার নিচের একটা বড় অংশ ভেঙে পড়েছে। এই ছাদের নিচের অংশে বেশ কিছু জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি কয়েকটি অংশে পলেস্তারাও খসে পড়ছে।

এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক এবং প্রাক্তনীরা। তাদের অভিযোগ, ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রীর প্রতীক এই বাংলাদেশ ভবন। এই ভবন রক্ষা করতে বিশ্বভারতীকে আরও বেশি সচেষ্ট হতে হবে। তাদের প্রশ্ন, এত টাকা খরচ করে এই ভবন তৈরি করা হয়েছে, তাহলে এই অবস্থা হবে কেন?

আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলোর অবস্থা খারাপ। বাংলাদেশ ভবন তো এই চার বছর আগে তৈরি হয়েছে। এরমধ্যেই ভেঙে পড়ছে, ভাবা যায় না। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব।

এই বিষয়ে জানতে চেয়ে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। 

এই ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ভবন তৈরির জন্য ২৫ কোটি রুপি দেয় বাংলাদেশ সরকার। শান্তিনিকেতনের দক্ষিণপল্লিতে প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর এই ভবন তৈরি করে ভারত সরকারের ন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এখানে একটি উন্নত মানের ডিজিটাল গ্রন্থাগার, জাদুঘর রয়েছে। এই জাদুঘরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ডাকটিকিট, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারের একাধিক নির্দেশ।

একইভাবে শাহাজাদপুরে কাছাড়িবাড়িতে প্রাপ্ত কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কেরোসিন বাতি, ঢাকনাযুক্ত বাটি, লবণদানি এখানে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। এসবের প্রতিটি গুরুদেব ব্যবহার করেছেন।

এছাড়া সুলতান যুগের বিভিন্ন মুদ্রা, ব্রিটিশ আমলের মুদ্রা, পনেরো-ষোল শতকের মাটি খনন করে প্রাপ্ত টেরাকোটার মূর্তিসহ একাধিক মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে জাদুঘরে।