কমছে রেড করিডোর, উন্নয়নে পিছু হটছে মাওবাদীরা

ভারতে কমছে রেড করিডোর। উন্নয়নের প্রভাবে পিছু হঠছে মাওবাদীরা। এমনটাই মনে করছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বর্তমানে দেশের ৭টি রাজ্যের মাত্র ৩০টি জেলার মধ্যেই মাওবাদীদের কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ রয়েছে। তাও আবার ক্রমশ কমছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য এমনটাই বলছে।

কয়েক দশক ধরে চলমান মাওবাদী সমস্যা রাশ টেনে ধরা সম্ভব হয়েছে উন্নয়ন আর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে জোরদার করায়।  একটা সময় দেশের ১১ টি রাজ্যের মধ্যে ৯০টি জেলার প্রায় মুক্তাঞ্চল বা মাওবাদীদের ভাষায় রেড করিডোর গড়ে পাল্টা শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল। এই অঞ্চলগুলোতে সহিংসতার ঘটনাও ৭০ শতাংশ কমে এসেছে। ২০১০ সালে ১ হাজার ৫ টি সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও ২০২০ সালে তা ছিল মাত্র ১৮৩ টি। সবচেয়ে বেশি মাও সক্রিয়তা কমেছে যে রাজ্যে, তা হলো বিহার। দেশের ১০টি রাজ্যের ৭০ টি জেলায় মাওবাদী অঞ্চলগুলোকে এশআরই প্রকল্পের আওতায় রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই এলাকাগুলোতে পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপাত্তার জন্য, আত্মসম্পর্ণ করা মাওবাদীদের স্টাইপেনের টাকা দিতেও খরচ করা হচ্ছে।

শুধু উন্নয়ন নয়, সামাজিকভাবেও মাওবাদী দর্শন আকৃষ্ট করছে না যুবসমাজকে। এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের। তাদের মতে, মাওবাদীদের মধ্যে যুব সমাজ থেকে সদস্য আসার প্রবণতা কমেগেছে। বর্তমানে মাওবাদীদের যে সব নেতা রয়েছেন, তারা প্রবীন। দলের মধ্যে থাকা যুবরা তাদের মানতে পারছে না। যা নিয়ে মত পার্থক্য স্পষ্ট হচ্ছে। এর ফলে সাংগঠনিকভাবে ব্যর্থতার মুখে পড়ছে মাওবাদীরা।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নন্দিনী সুন্দরের মতে, ‘মাওবাদ তৈরিই হয়েছে প্রশাসনিক ব্যর্থতা আর দুর্নীতির কারণে। ফলে সরকার যদি নিজের ঘর ঠিকঠাক গোছাতে পারে তাহলে এই সমস্যা নিজে থেকেই শেষ হয়ে যাবে। তা ছাড়া মাওবাদের আবেদনও স্থিমিত হয়ে এসেছে, রাশিয়া-চীন অনেক আগেই এই আদর্শকে প্রত্যাখ্যান করেছে, ফলে নতুন ক্যাডার পাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।’

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বাম আমলের শেষ দিকে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা মাওবাদ উন্নয়নের জেরে পিছু হঠেছে। তৃণমূল সরকার আসার পর ২০১২ সালের পর থেকে কোনও মাওবাদী আক্রমণ রাজ্যে ঘটেনি। জানা গেছে, এ বিষয়ে রাজ্য সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, উন্নয়ন আর রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির জোরেই জঙ্গলমহল শান্ত। মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল, তাদের বেশিরভাগকেই জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এলাকায় হয়েছে রাস্তা, উদ্যোগ বেড়েছে বিনিয়োগের। প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছে গিয়েছে বিদ্যুৎ। হয়েছে স্টেডিয়াম, তীরন্দাজ অ্যাকাডেমি।

জঙ্গলমহলে মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িতদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ নিয়োগ উদ্যোগে ২৯ হাজার জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। সাবেক মাওবাদীদের মধ্যে ১ হাজার ২০০ জনকে স্পেশাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হয়েছে। মাওবাদী সহিংসতায় ভুক্তভোগী পরিবারের মধ্যে থেকেও একজন করে পেয়েছে স্পেশাল হোম গার্ডের চাকরি।