ভারতে রাম নবমীর র‌্যালি ঘিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

ভারতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান দেবতা রামের জন্মদিন উদযাপন উৎসব ‘রাম নবমী’র র‌্যালি চলাকালে দেশটির বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলোতে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের খারগোন জেলা থেকে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবার থেকে ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েক ডজন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এসব ভিডিওতে জাফরান স্কার্ফ পরা হিন্দুদের র‌্যালিতে অংশ নিতে দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে লোকজনের হাতে ছিল লাঠি ও তলোয়ার। মুসলিমদের বাড়িঘর ও মসজিদের বাইরে মোটরসাইকেল থামিয়ে, ‘গণহত্যার হুমকি’ দিয়ে উস্কানিমূলক গান বাজাতে দেখা গেছে। সঙ্গে ছিল বিদ্বেষমূলক নানা স্লোগান।

ভিডিওগুলোর একটিতে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারের মুজাফফরপুর জেলায় একজনকে একটি মসজিদের প্রাচীরে উঠে এর প্রবেশদ্বারে জাফরান পতাকা লাগাতে দেখা গেছে। এ সময় অন্যরা তলোয়ার ও হকি স্টিক উঁচিয়ে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে। তবে আল জাজিরার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এসব ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

কিছু জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরাও মিছিলে ঢিল ছোড়ে। এতে করে আরও উত্তেজনা তৈরি হয়। কিছু ক্ষেত্রে এমনকি পুলিশ সদস্যদেরও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিতে দেখা গেছে।

মধ্যপ্রদেশের খারগোন জেলার বাসিন্দা ফজলুদ্দিন শেখ মঙ্গলবার আল জাজিরাকে বলেছেন, রবিবার রাতে রাম নবমীর র‌্যালি চলাকালে সরাফা বাজার এলাকার একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

খারগোনে অন্তত ১০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেখানকার সহিংসতায় একজন পুলিশ সদস্যসহ ২৪ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়। এক পর্যায়ে জেলার কিছু অংশে কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

এসব ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত সহিংসতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। তবে সহিংসতার জন্য উল্টো মুসলমানদেরই দায়ী করেছেন মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে তিনি বলেছেন, ‘মুসলিমরা যদি এই ধরনের হামলা চালায় তাহলে তাদের ন্যায়বিচারের আশা করা উচিত নয়।’ কংগ্রেস নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

গুজরাট পুলিশের মহাপরিচালক আশিস ভাটিয়া হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘রাম নবমীর মিছিল যখন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল, সেই সময় পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তারপরই সহিংসতার ঘটনা ঘটতে শুরু করে। তবে পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ তিনি জানান, খামভাতে সংঘর্ষের জেরে এক বৃদ্ধ প্রাণ হারিয়েছেন।

মধ্যপ্রদেশের বারওয়ানির জেলা কালেক্টর শিবরাজ সিং সোমবার টেলিফোনে আল জাজিরাকে বলেছেন, একটি মসজিদের কাছে উচ্চস্বরে সঙ্গীত বাজানোর ঘটনায় উত্তেজিত কিছু মুসলিমরা রাম নবমীর র‌্যালিতে পাথর ছোড়ে। ফলে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তবে শহরে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। পরিস্থিতি ‘এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে।