উত্তরপ্রদেশে জমি-বাড়ি পেলো বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ৬৩টি হিন্দু পরিবার

প্রায় পাঁচ দশক বা তারও বেশি আগে বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসা ৬৩টি হিন্দু পরিবারের হাতে চাষাবাস ও আবাসনের জন্য জমির মালিকানা তুলে দিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।  

ওই রাজ্যের বিজেপি শাসিত সরকার বলছে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে নির্যাতিত হিন্দুদের ভারতে আশ্রয় দেওয়ার নীতি অনুসরণ করেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।  

ওই ৬৩টি পরিবারের প্রতিটিকে দুই একর করে চাষের জমি এবং ২০০ বর্গমিটার আবাসিক প্লট-সমেত একটি করে বাড়ি উপহার দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ। এই সব জমি ও আবাসন সবই দেওয়া হয়েছে কানপুর দেহাত জেলার রসুলাবাদ এলাকায়।

মঙ্গলবার রাজধানী লখনৌতে এক জমকালো অনুষ্ঠানে ওই পরিবারগুলোর হাতে জমি-বাড়ির পাট্টা বা আবাসনসত্ত্ব তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। এছাড়া রাজ্যের দুজন উপমুখ্যমন্ত্রী, কেশবপ্রসাদ মৌর্য ও ব্রজেশ পাঠক ও প্রভাবশালী মন্ত্রী স্বতন্ত্র প্রসাদ সিং-ও অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন – যা থেকে বোঝা যায় অনুষ্ঠানটিকে সরকার কতটা গুরুত্ব দিয়েছে। 

মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বিগত বহু বছর ধরে কোনও রাজ্য সরকারই এই পরিবারগুলোর জন্য কিছুই করেনি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এই হিন্দু পরিবারগুলোর এত বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটল।’  

আদিত্যনাথ আরও জানান, ‘এই পরিবারগুলো সত্তরের দশকে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। তখন মিরাট জেলার হস্তিনাপুরে একটি সুতোর মিলে পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছিল। 

‘কিন্তু ১৯৮৪ সালে ওই মিলটি বন্ধ হয়ে গেলে তারা চরম দুর্দশায় পড়েন। এরপর গত আটত্রিশ বছর ধরে কোনও সরকারই এই পরিবারগুলোর দিতে তাকায়নি বা তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেনি’, তিনি আরও জানান।  

কীভাবে রাজ্য সরকার এই বাংলাদেশি হিন্দু পরিবারগুলোর সন্ধান পেলো সেই কাহিনীও খুব কৌতূহলোদ্দীপক।   

মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যখন নরেন্দ্র মোদি সরকার বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য আইন প্রণয়ন করে, তখন থেকেই আমরা খুঁজতে শুরু করি এরকম পরিবার আমাদের রাজ্যে কোথায় আছেন, কতজন আছেন।’ 

‘এরজন্য পুরনো দলিল-দস্তাবেজ, সরকারি নথিপত্র তন্নতন্ন করে খোঁজা শুরু হয়। এভাবেই হঠাৎ আমরা এই বাংলাদেশি হিন্দু পরিবারগুলোর সন্ধান পাই, দেখি যে তারা চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন।’ 

‘হস্তিনাপুর মিল বন্ধ হওয়ার পর এরা সরকারের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন বহুদিন, কিন্তু কোনও সাহায্য পাননি। দুটো পরিবার তো পুরোপুরি নিশ্চিহ্নই হয়ে গেছে। যে ৬৩ পরিবার এখনও টিকে আছে, তাদের সাহায্য করতে পেরে আমরা সত্যিই গর্বিত’, বলেন তিনি। 

কোভিড মহামারির জন্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম দুবছর ধরে স্তব্ধ ছিল – নইলে মুখ্যমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় এই হিন্দু পরিবারগুলো আরও আগেই বাড়ির মালিকানা পেয়ে যেতেন।  

ভারতে চলে আসার দীর্ঘ পাঁচ দশক পর এই পরিবারগুলো প্রথমবারের মতো স্থায়ীভাবে জমি-বাড়ির মালিকানা পেলেন, সে জন্য তারা অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন আদিত্যনাথ সরকারের প্রতি। তবে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভারতের মধ্যেই কিন্তু তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক আছে – আড়াই বছর আগে এই আইনটি পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই তুমুল প্রতিবাদ হয়েছিল।