ভারত কেন রাশিয়া থেকে আরও তেল কিনছে?

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে সারা বিশ্বে বাড়ছে তেলের দাম। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করছে। কিন্তু মস্কো থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাপে থাকা ভারত হাঁটছে বিপরীত স্রোতে। গত বছরের তুলনায় এই বছর রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের জ্বালানি কেনার পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ভারত সরকার রুশ তেল কেনার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। তারা বলছে, একমাসে ভারত যে তেল কিনবে তা মস্কোর কাছ থেকে ইউরোপের কেনা তেলের চেয়ে অনেক কম।

রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির চিত্র

ভারত কেন বেশি রুশ তেল কিনছে?

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে মূল্যছাড়ের সুবিধা নিচ্ছে। এই সুবিধা এমন এক সময়ে দিল্লি নিচ্ছে যখন বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এসব আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ না হলেও, ‘রাশিয়াকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। একটি আগ্রাসনকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। নিশ্চিতভাবে এর ভয়াবহ প্রভাব রয়েছে’।

গত মার্চে দিল্লি সফরের সময় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসও ভারতকে রাশিয়ার তেলের ওপর নির্ভরতা কমানোর আহ্বান জানান। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেদিন দিল্লি সফরে ছিলেন সেদিনই শহরে ছিলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ল্যাভরভ বলেন, ভারত যেসব পণ্য রাশিয়ার কাছ থেকে আমদানি করতে চায় তা নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত মস্কো। এছাড়া তিনি এসব আমদানির মূল্য রুবলে পরিশোধের আহ্বান জানান।

ভারতের তেল সরবরাহকারী কারা?

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর ভারত বিশ্বে তেলের তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোক্তা। দেশটি তাদের ব্যবহৃত তেলের ৮০ শতাংশের বেশি আমদানি করে থাকে। তবে ২০২১ সালে ভারতের মোট তেল আমদানির মাত্র দুই শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। পণ্য গবেষণা সংস্থা কেপলার এই হিসাব দিয়েছে। তাদের হিসাবে, ভারত গত বছর এক কোটি ২০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে।

ভারত এর চেয়ে অনেক বেশি তেল আমদানি করেছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদকদের কাছ থেকে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও নাইজেরিয়া থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তেল আমদানি করে দিল্লি।

এই বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া থেকে কোনও তেল আমদানি করেনি ভারত। তবে কেপলারের হিসাব বলছে, এই বছরের মার্চ, এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে ২ কোটি ৬০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল কেনার চুক্তি করেছে। যা ২০২১ সালে মোট কেনার চেয়েও অনেক বেশি।

কেমন চুক্তিতে তেল পাচ্ছে ভারত?

ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের ক্রেতা কমে গেছে। বেশ কয়েকটি দেশের সরকার ও কোম্পানি রুশ তেল আমদানি বাদ দেওয়ায় মূল্য কমে গেছে।

ভারতের কাছে ঠিক কোন দামে তেল বিক্রি হচ্ছে তা স্পষ্ট না হলেও কেপলারের বিশ্লেষক ম্যাট স্মিথের ধারণা, অপরিশোধিত তেলে ব্যারেল প্রতি ৩০ ডলারের মতো ছাড় দিচ্ছে রাশিয়া। ফলে ধারণা করা হচ্ছে ভারত বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ছাড়ে রুশ তেল কিনতে পারছে।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কী?

মূল্য আকর্ষণীয় হলেও ভারতের বড় বড় তেল শোধণ কোম্পানিগুলো রুশ তেল কেনার অর্থ পরিশোধে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। কারণ রাশিয়ার ব্যাংকের ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বাণিজ্যের উভয় দিকেই এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

ভারত যে বিকল্পগুলো দেখছে তার মধ্যে একটি হলো স্থানীয় মুদ্রার ওপর ভিত্তি করে লেনদেন ব্যবস্থা করা। যেখানে ভারতীয় আমদানিকারকরা রাশিয়াকে ডলার বা ইউরোর পরিবর্তে রুবলে অর্থ প্রদান করবে।

এই ব্যবস্থার প্রতি নিজেদের আপত্তি স্পষ্ট করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের বক্তব্য এতে, ‘রুবল সমর্থন পেতে পারে বা ডলার-ভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে পারে’।

বিকল্প কোথা থেকে তেল কিনতে পারে?

আর্থিক বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান রিফাইনিটিভের হিসাবে, ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল কেনার পরিমাণ বেড়েছে। তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে হয়তো এটি টেকসই হবে না। কারণ ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর রুশ তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যবহার করতে চাইছে ওয়াশিংটন।

এমনও ইঙ্গিত রয়েছে ইরানের সঙ্গে তেল বাণিজ্য ফের শুরু করতে পারে ভারত। আরও ভালো কোনও ব্যবস্থার অধীনে ভারতীয় শোধণকারীরা ইরানি তেল কিনতে পারে। তিন বছর আগে ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হওয়ার পর তেহরানের কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেয় দিল্লি।

সূত্র: বিবিসি