মমতার বৈঠকে বামেরা, বিজেপি বিরোধী জোটের সম্ভাবনা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বৈঠকে যোগ দিচ্ছে বামেরা। মঙ্গলবার এমনটাই জানিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

প্রথমে না করলেও পরে দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী জোটে একঘরে হয়ে যাওয়ার ভয় থেকেই দলটি এই বৈঠকে যোগ দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

জানা গেছে, দিল্লিতে বুধবারের এই বৈঠকে বামেদের প্রতিনিধি হয়ে সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা অথবা দুই বাম দলের এমপিরা উপস্থিত থাকবেন।  সংসদের দুই কক্ষে শক্তি ভারসাম্যে সিপিএমের যা অবস্থা, তাতে তাদের বিরোধী জোটে থাকা বা না-থাকায় বিশেষ কিছু যায় আসে না। লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে সিপিএমের এমপি রয়েছেন মাত্র পাঁচ জন। আর গোটা দেশে ১০০ বিধায়কও তাদের নেই বর্তমানে।

চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগেই আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে অবিজেপি, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোকে একাট্টা করে গেরুয়া শিবিরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা সাফ বলেছেন, ‘দেশজুড়ে বিজেপি যেভাবে ধর্মীয় মেরুকরণের দিকে রাজনীতিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধেই লড়াই করতে হবে সব বিরোধীদের।’ এই কারণে ১৫ জুলাই দিল্লিতে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের নিয়ে বৈঠক আহ্বান করেছেন তিনি।

মমতার ডাকা এই বৈঠকে কংগ্রেসসহ সব বিজেপি বিরোধীরা যোগ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিলেও বাংলায় তৃণমূল ও কেরালায় কংগ্রেস বিরোধিতার কারণে বামেরা নিজেদের সরিয়ে রেখেছিল বলে মত রাজনৈতিক মহলের। এক্ষেত্রে দলের দক্ষিণ ভারত ও বাংলা লবির প্রভাব কাজ করছিল বলে তারা মনে করছেন।

রাষ্ট্রপতি ভোট নিয়ে যে জোটস্বপ্ন দেখছেন মমতা তার প্রয়োগ তিনি চান ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের জন্য। কিন্তু তার আগেই ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে সিপিএমকে লড়াই করতে হবে বিজেপি, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কেরালাতেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্ষমতায় এসেছে সিপিএম। তাই এই বৈঠকে যোগ দেওয়া নিয়ে দলের একাংশ নারাজ ছিল। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থী নিয়ে আলোচনার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা ১৫ জুনের বৈঠকে যোগ দেবে না সিপিএম। কট্টর বিজেপি বিরোধী বামেদের এই অবস্থান বিস্মিত করছিল বিরোধীদের। কিন্তু শেষমেষ নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসলেন ইয়েচুরিরা।

গত শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিয়ে আট অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীসহ ২২ জন অবিজেপি নেতা-নেত্রীকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এই তালিকায় ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে. সি. রাও, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম. কে. স্ট্যালিন, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন ও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী, আরজেডি সভাপতি লালুপ্রসাদ যাদব, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার, আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধুরি, কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ. ডি. কুমারস্বামী।

মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে, জয়রাম রমেশ ও রণদীর সিং সুরজেওয়ালা দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবের এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে। হাসপাতালে ভর্তি আছেন কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তাই তিনি এই বৈঠকে থাকছেন না।