মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত

প্রতিশ্রুতি মেনে আদালতে আত্মসমর্পণের শর্তে বাংলাদেশের গায়িকা ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের গ্রেফতারি পরোয়ানার ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, এই সংক্রান্ত মামলায় গায়িকাকে নিম্ন আদালতে চলা মূল মামলার বিচার প্রক্রিয়াতেও অংশ নিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি সিদ্ধার্থ রায় চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ।

হাইকোর্টের জারি করা আগামী তিন সপ্তাহ এই অন্তর্বতী স্থগিতাদেশের সময়ে তিনি অন্য কোনও কারণে এ দেশে পদার্পণ করতে পারবেন না বলেও জানিয়েছে আদালত।

ওপার ও এপার বাংলার বহুল জনপ্রিয় গান, ‘খায়রুন লো... তোর লম্বা মাথার কেশ’ কিংবা ‘নান্টু ঘটকের কথা শুইন্যা’ সুপারহিট গানের গায়িকা মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত।

জানা গেছে, প্রায় চৌদ্দ বছর আগে ভারতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিতেন। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য শক্তিশঙ্কর বাগচীর সঙ্গে গায়িকার লিখিত চুক্তি হয়েছিল। সেইমতো ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বহরমপুরের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান শিল্পী হিসেবে মমতাজকে আনার জন্য বায়না করেছিলেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু অভিযোগ, টাকা নেওয়ার পরও অনুষ্ঠানে আসেননি গায়িকা। যথারীতি অনুষ্ঠানস্থলে ভাঙচুর হয়। চরম হেনস্তার মুখে পড়তে হয় অনুষ্ঠানের আয়োজক শক্তিশঙ্কর বাগচীকে। পরে টাকা ফেরত দিতেও অস্বীকার করেন মমতাজ। এরপর চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় থানার দ্বারস্থ হন শক্তি। কিন্তু থানা এ ব্যাপারে অভিযোগ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। বাধ্য হয়ে বহরমপুর আদালতের দ্বারস্থ হন শক্তি। মমতাজের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণাসহ একাধিক ধারায় মামলাও দায়ের করেন। সেই সূত্রেই ২০০৯ সালে মমতাজের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছিল আদালত। পরে সমন কার্যকর না করায় তার বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। এরই মধ্যে নিম্ন আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে বাংলাদেশে চলে যান গায়িকা। নিম্ন আদালতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শক্তি। ২০১০ সালে নিম্ন আদালতের নির্দেশ খারিজ করে মমতাজের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রাখে হাইকোর্ট।

এই সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্টে মমতাজের আইনজীবীরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জানান, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি ফের মুর্শিদাবাদ আদালতে শর্ত সাপেক্ষ আত্মসমর্পণ করবেন। আদালতের নির্দেশ মতো বিচারপ্রক্রিয়াতেও অংশ নেবেন। তার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, প্রতিশ্রুতি মতো তিনি আত্মসমর্পণ না করলে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার মামলার প্রক্রিয়া নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।

হাইকোর্টে শক্তি শঙ্করের অভিযোগ, বাংলাদেশের গায়িকাকে এই দেশে গ্রেফতার করে পদার্পন না করানোয় এই দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাই প্রশ্নের মুখে পড়ছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকার পরও তিনি পাসপোর্টে নাম পরিবর্তন করে এদেশের পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।