মন্ত্রিত্ব কেন ছাড়ব, পাল্টা প্রশ্ন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্ত্রিত্ব ছাড়া দাবিতে বিজেপিসহ বিরোধীরা রাজ্যজুড়ে সরব হয়েছেন। এর মধ্যে বুধবার পার্থ সাফ জানিয়ে দিলেন, তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন না।

মঙ্গলবারই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যবহৃত গাড়িটিকে বিধানসভার গ্যারেজে দেখতে পাওয়া যায়। এরপরই জল্পনা শুরু হয়ে যায় তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করছেন দিচ্ছেন বা তাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও এখনও এ প্রশ্নে তার দল তৃণমূল কংগ্রেস তার পাশেই রয়েছে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’-য় পার্থ সংক্রান্ত যেসব সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে তাতে তাকে কোথাও মন্ত্রী বা তৃণমূল মহাসচিব বলা হচ্ছে না। এতে জল্পনা আর দৃঢ় হয়।

সকালে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ইডি কর্মকর্তারা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে জোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। সেখানে প্রবেশের সময় সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন, ‘পার্থ দা, আপনি কি মন্ত্রিত্ব ছাড়বেন?’ এর উত্তরে পার্থ পালটা প্রশ্ন করেন, ‘কারণ কী?’ এই ছোট্ট জবাবেই তিনি এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন ইডির হাতে গ্রেফতার হলেও মন্ত্রিত্ব ছাড়ার কথা ভাবছেন না।

এদিকে জানা গেছে, ভুবেনশ্বর এইমস হাসপাতাল থেকে ফেরার পর থেকে পার্থ থাকছেন সিজিও কমপ্লেক্সের ইডি ভবনের ছয় তলার কনফারেন্স রুমের একটি অস্থায়ী লকআপে। এখানে কোনও অ্যাটাচ বাথরুম নেই। লকআপে রয়েছে একটি পাখা, বিছানা ও একটি চেয়ার। শৌচালয়ে যাওয়ার সময় সঙ্গে যাচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষীরা।

আরও জানা গেছে, জেরার সময়টুকু ছাড়া বেশিরভাগ সময় পার্থ শুয়ে বসেই সময় কাটাচ্ছেন। দুপুরে সাধারণ খাবার ছাড়াও গ্রিন টি খাচ্ছেন। তার শারীরিক অবস্থার দিকেও বিশেষ নজর রাখছেন ইডি কর্তারা। দেওয়া হচ্ছে এইমসের চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো ওষুধ। মঙ্গলবার ও বুধবার তাকে টানা জেরা করা হয়।

সূত্রের খবর, গোটা দুর্নীতিতে পার্থও ভূমিকা ঠিক কী ও কতোটা তাও জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দরা। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তিনি তদন্তে সহযোগিতা করছিলেন না। ‘পুরনো কথা মনে করতে পারছেন না’, ‘জানি না’, ‘বলতে পারব না’ আর ‘মনে করতে পারছি না’, এসব বলছিলেন পার্থ। তবে, মঙ্গলবার তৃণমূল মহাসচিব জানিয়েছেন, তিনি তদন্তে সহযোগিতা করবেন।

জানা গেছে, স্কুল নিয়োগে কার কার কাছ থেকে সুপারিশ আসত তা জানতে চাওয়া হয় পার্থর কাছে। তাতে নাকি তাতে তিনি নাকি বলেছেন, ‘সবস্তর থেকেই সুপারিশ আসত।’ কিন্তু কারা এই সুপারিশ করতেন তা এখনও বলেননি পার্থ। এমনটাই সূত্রের খবর।

এদিকে, পার্থর ফ্লোরে ইডির স্থায়ী কমন লকআপে রয়েছেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। সেখানে আছে দুটি ফ্যান, অ্যাটাচ টয়লেট ও চারটি বেড। এটি চারজনের কমন লক আপ। আপাতত সেখানে অর্পিতা ছাড়া আর কেউ নেই। ইডি-র হেফাজতে তাকে আর পাঁচজনের মতোই খাবার খেতে দেওয়া হয়েছে। সকালে ব্রেকফার্স্ট, দুপুরে লাঞ্চ এবং রাতে ডিনার। কিন্তু ইডি-র দেওয়া ভাত-রুটি খেতে চাইছেন না অর্পিতা এমনটাই সূত্রের খবর। ইডির কর্মকর্তাদের ড্রাই ফ্রুট খেতে চেয়েছেন অর্পিতা। অর্পিতার আইনজীবী কাজু, কিশমিশ, পেস্তা দিতে গিয়েছিলেন। ইডিকে সেই খাবার ইতোমধ্যে দিয়ে আসা হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও ইডি কর্তারা এখনও তা অর্পিতাকে দেননি। পাশাপাশি গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই একই পোশাকে দেখা গিয়েছিল অর্পিতাকে। ওই পোশাকেই শারীরিক পরীক্ষার জন্য জোকার ইএসআই হাসপাতালে গিয়েছিলেন। আদালতেও দেখা গিয়েছিল একই পোশাকে।

সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিকালে অর্পিতার আইনজীবী বেশ কিছু পোশাক দিয়েছে এসেছেন ইডি-কে। ড্রাই ফ্রুট না দিলেও ওই পোশাক অর্পিতাকে দেওয়া হয়েছে বলে খবর সূত্রের। সেই পোশাক পরেই বুধবার শারীরিক পরীক্ষার জন্য ফের ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাকে।