দিল্লিতে শেখ হাসিনা-মমতা সাক্ষাতের সম্ভাবনা ক্ষীণ

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাতের সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেনি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা থাকবেন কিনা। বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে, শেখ হাসিনার সফরের সময় মমতা দিল্লিতে আসতে রাজি নন এবং ইতোমধ্যে তা নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন।

আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শেখ হাসিনার যে ভারত সফর শুরু হতে যাচ্ছে, তাতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় ভারতীয় প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ-লাগোয়া রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা থাকবেন কিনা, এ ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাব ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার এড়িয়ে গেছে। 

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তার সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের সময় ভারতের প্রতিনিধি দল কাদের নিয়ে গঠিত হবে, সেটি এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। মাঝে আরও তিন-চার দিন আছে, অপেক্ষা করুন– কারা কারা থাকবেন সেটা আপনারা ঠিক সময়েই জানতে পারবেন।’ 

অতীতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ সম্মেলন বা সফরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরামের মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা কেউ কেউ উপস্থিত থাকলেও এবারও সেরকম কিছু হবেই– সেটা তিনি একেবারেই নিশ্চিত করতে চাননি। 

বাংলা ট্রিবিউন অবশ্য জানতে পেরেছে, শেখ হাসিনার চার দিনব্যাপী সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি আসতে রাজি নন– তা তিনি ইতোমধ্যে দিল্লিকে জানিয়ে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি নিজের ব্যস্ততার কথাই জানিয়েছেন। দিল্লি অবশ্য তাকে এখনও রাজি করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু তাতে বিশেষ কোনও লাভ হবে বলে মনে করা হচ্ছে না। 

গত কয়েক সপ্তাহ যেভাবে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) বা সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন তদন্তকারী সংস্থাগুলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে বা মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পর্যন্ত দুর্নীতির মামলায় বারবার তলব করা হচ্ছে– সেটাকে তিনি কেন্দ্রের রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতা হিসেবেই দেখছেন। পার্থ চ্যাটার্জি বা অনুব্রত মণ্ডলের মতো তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন– কোটি কোটি নগদ রুপি, সম্পত্তি, দামি গাড়ি ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে, আরও অনেককেই জেরার জন্য ডাকা হচ্ছে। 

শেখ হাসিনা (বাঁ থেকে), নরেন্দ্র মোদি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি

এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের সঙ্গে কোনও ধরনের সহযোগিতার পথে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই মমতা মনে করছেন। এমনকি সেটা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের খাতিরে হলেও। আর সে কারণেই তিনি শেখ হাসিনার সফরের সময় দিল্লি যাবেন না বলে স্থির করেছেন। 

দিল্লিতে তৃণমূল কংগ্রেসের একজন সিনিয়র এমপি এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার অনুরোধ যে তিনি এবার রাখতে পারলেন না, সেটা জানিয়ে দিয়ে সম্ভবত দু-একদিনের ভেতরেই মমতা তাকে একটা চিঠি লিখবেন। এবারে দেখা না হলেও আগামীতে শিগগির যে দেখা হবে, সেই কথাও তিনি বলবেন বলে জানতে পেরেছি।’   

তবে মমতা দিল্লি না এলেও শেখ হাসিনার সফরের সাফল্য তার ওপর নির্ভর করবে না বলেই ভারতে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় মনে করছে। 

সচিবালয়ের একজন প্রথম সারির কর্মকর্তার কথায়, ‘এই সফরে যে তিস্তা চুক্তি সম্পাদিত হবে না, সেটা সবারই জানা। কাজেই মমতা এলেন কী এলেন না, তাতে খুব বেশি কিছু পার্থক্য হবে বলে আমরা মনে করছি না।’   

তবে তারপরও দিল্লি চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মুখ্যমন্ত্রী মমতার মধ্যে বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয়ে সরাসরি ও খোলাখুলি কথাবার্তা হোক। শেখ হাসিনা নিজেও দিল্লিতে তার সঙ্গে দেখা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এত কিছুর পরও সিবিআই আর ইডি'র তৎপরতা সেই কূটনৈতিক প্রয়াসে আপাতত জল ঢেলে দিলো বলেই মনে করা হচ্ছে।