কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ সেন্টার খোলার ভাবনা

সীমান্তে একটা কাঁটাতার থাকলেও ভারত- বাংলাদেশের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের সম্পর্কে একটা আবেগের উষ্ণতা রয়েছে। দুই বাংলার সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, শিল্পক্ষেত্রে পারস্পরিক আদান প্রদানের ধারা বহমান। সেই ধারাবাহিকতায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় দৃষ্টান্তমুলক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মানস কুমার সান্যাল জানিয়েছেন, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ সেন্টার খোলার ভাবনা চিন্তা চলছে। 

সংবাদ বা সিনেমায় কীভাবে উঠে আসে দেশভাগের কথা? এই বিষয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের জার্নালিজম সার্টিফিকেট কোর্স একটি আন্তর্জাতিক আলোচনাসভার আয়োজন করে। প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মানস কুমার সান্যাল। তিনি বলেন, ‘দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের উদ্দেশে আমরা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছি। আগামীদিনে সাহিত্য, সিনেমা, বক্তৃতা ইত্যাদির মাধ্যমে এই মেলবন্ধন আরও জোরালো হবে। সংবাদ বা সিনেমায় দেশভাগের কথা আমাদের প্রভাবিত করে তা বলাই বাহুল্য।’

তিনি আরও জানালেন, ‘কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ সেন্টার খোলা যায় কিনা এই বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা শুরু করেছি।’

আলোচনাসভায় বাংলাদেশের বিশিষ্ট পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’, ‘সীমান্তরেখা’, ‘রূপসা নদীর ধারে’ ইত্যাদি ছবির ক্লিপিংকে সামনে রেখে দেশভাগে বাঙালির যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন। প্রশ্ন ওঠে দেশভাগের এত বছর পর বাঙালির কী লাভ, ক্ষতি হলো? আজ অবধি বাঙালিরা কী সেটা মাপতে পেরেছে? প্রশ্ন আরও ওঠে দেশভাগ কী অনিবার্য ছিল? তানভীর জানালেন, “দেশভাগের ইতিহাস বড্ড জটিল নকশি কাঁথা দিয়ে গাঁথা। দেশভাগ নিয়ে কাজ করা বড্ড বিপজ্জনক। কারণ গোষ্ঠী স্বার্থ, ধর্ম ইত্যাদি এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই এই বিষয়ে সংবাদ লেখা বা সিনেমা তৈরিতে গভীর গবেষণার প্রয়োজন। প্রামাণ্য বাস্তবতা সামনে এনে বিশ্লেষণ প্রয়োজন। কারণ অজানা থেকেই মানুষের মধ্যে ভয়ের বিষয়টা আসে। জানার বিষয়টি বৃদ্ধি পেলে ভয় হয় না।”

কেন এই ধরনের সেমিনারের প্রয়োজন হলো? এই বিষয়ে বাংলার কোর্স কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক সুখেন বিশ্বাস জানালেন, ‘দেশভাগ বাঙালিদের কাছে একসীমাহীন যন্ত্রণা। বসত বাড়ি, জমি-জমা, আত্মীয়স্বজন, পাড়ার চণ্ডীমণ্ডপ ফেলে রাতারাতি লাখ লাখ মানুষ একসময় চলে এসেছিল ভারতে। তা নিয়ে অনেক সংবাদ, সাহিত্য, সিনেমা ইত্যাদি হয়েছে। তার প্রামাণ্য নিয়েই ভারতীয় স্বাধীনতার ৭৫ এবং বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ৫০ পূর্তিতে আমরা এই সেমিনারের কথা আমরা ভেবেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় চারশো ছাত্রছাত্রী গবেষকসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সঞ্জিৎ মণ্ডল, অধ্যাপক প্রবীর প্রামাণিক, অধ্যাপক নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।