আজ মহাষষ্ঠী, দেবীর বোধন কলকাতার বাড়ির পুজোয়

আজ মহাষষ্ঠী, দেবীর বোধন। শহর, গ্রাম সর্বত্র জনতার উৎসাহ বাঁধন ছাড়া। বাংলার উৎসব শুরু। আর সেই উৎসবের সূচনা দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে। দশভূজাকে দশ প্রহরণে সজ্জিত করে আবাহন করা হয়। বাগবাজার সর্বজনীন, শোভাবাজার রাজবাড়ি, সাবর্ণ চৌধুরীদের বাড়িতে দেবীর বোধন দেখার জন্য প্রবীণদের ভিড়। এই ভিড় থেকেই আলোচনাটা ডানা মেলল। দুর্গাপুজোয় বোধনের প্রয়োজনীয়তা কী?

রাজবাড়ির পুরোহিত শোনালেন শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা। তার কথায় ওঠে এলো অকালবোধনের প্রসঙ্গ। পুরাণ মতে সূর্যের উত্তরায়ণ হল দেবতাদের দিন। দেবতারা তখন জেগে থাকেন। সূর্যের এই গমনে সময় লাগে ৬ মাস। এই ছয় মাস দেবতাদের একদিনের সমান। তাই দিনের বেলা দেবপূজা প্রশস্ত। কিন্তু রাবণ বধের জন্য শরৎকালে রামচন্দ্র অকাল বোধন করেছিলেন। এই সময়টা সূর্যের দক্ষিণায়ন, ফলে দেবতাদের কাছে রাত্রি। দেবতারা তখন নিদ্রিত থাকেন। তাই রাবণ বধের উদ্দ্যেশ্যে দেবী দুর্গাকে জাগ্রত করার জন্য 'অকাল বোধন' করতে হয়েছিল।

এই অকাল বোধনেরও আলাদা গল্প আছে। লঙ্কার রাজা রাবণ বসন্তকালে চৈত্র মাসে দেবী পার্বতী কে পুজো করে সন্তুষ্ট করলে দেবী তাকে সব বিপদ থেকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু শর্ত ছিল যদি সে দেবীর পূজা মন্ত্র শ্রী শ্রী চন্ডীতে কোনও ভুল করলে দেবী তাকে ত্যাগ করবেন। এই কারণে রামের সব অস্ত্র রাবণের ওপর বিফল হয়ে যায়। তখন ব্রহ্মা রামচন্দ্রকে দেবী পার্বতীর পুজো করতে বলেন। কারণ দেবী এই সময় মর্ত্যে তার পিতৃগৃহে আসেন। রাম দেবী পার্বতীর উদ্দেশ্যে ১০৮টি পদ্ম দিয়ে অঞ্জলি দেবেন স্থির করেন। দেবী তাকে পরীক্ষা করার জন্য একটি পদ্ম তিনি হরণ করেন।

তখন রামচন্দ্র নিজ চক্ষু দেবীকে দান করতে চাইলে দেবী পার্বতী তাকে বিরত করেন ও বর দেন। পরে হনুমান দশমী তিথিতে রাবণ কল্যাণে শ্রীশ্রী চন্ডী পাঠ রত বৃহস্পতিকে অজ্ঞান করে শ্রীশ্রী চন্ডী অশুদ্ধ করলে রাবণকে ত্যাগ করেন দেবী। রাবণ দেখে দেবী তাকে ত্যাগ করে কৈলাসে চলে যাচ্ছেন। রাবণের শত মিনতি সত্ত্বেও দেবী পার্বতী আর ফিরে তাকালেন না। তারপর রামচন্দ্র রাবণ বধ করেন।

মানুষের বিশ্বাস থেকেই দেবী মাহাত্ম্যের সৃষ্টি। তার আবেদন দেশকালভেদে আবহমান।