এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, পুলিশের উপস্থিতিতেই জেএনইউর শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে বেশ কিছু লোক। পুলিশ হামলা থামাতে কিছুই করেনি।
ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, আইনজীবীদের একটি দল হামলার সময় ‘ভারত দীর্ঘজীবী হোক, জেএনইউ নিপাত যাক’ স্লোগান দেন। বিজেপির সাংসদ ওপি শর্মাকেও আদালতের বাইরে এক ব্যক্তিকে হামলা করতে দেখা যায়। তার অভিযোগ ওই ব্যক্তি পাকিস্তানের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এক আইনজীবীকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ওপর হামলার সময় আদালতের ভেতর এক ব্যক্তিকে লাথি দিতে দেখা যায়। এ সময় সাংবাদিকরা হামলা ও হুমকির শিকার হন। অনেকের মোবাইলও কেড়ে নেওয়া হয়।
ছাত্র সংসদ নেতা কানহাইয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা ধর্মঘট করছেন। শনিবার থেকেই শিক্ষার্থীরা তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। সোমবার শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০০ শিক্ষকও ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে প্রতিবাদ। দেয়ালে দেয়ালে লাগানো হয়েছে প্রতিবাদী পোস্টার। ক্যাম্পাসে শিক্ষকরাও মিছিলে অংশ নেন।
এদিকে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে ক্লাসের ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এম জগদেশ কুমার। তিনি বলেন, ধর্মঘটে বিষয়টির সমাধান হবে না। সমাধানের জন্য আলোচনা করতে হবে। প্রশাসন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এবং তাদের মত প্রকাশের অধিকারের পক্ষে অবস্থান’ করছে জানিয়ে ভিসি বলেন, তদন্ত কমিটিকে সুষ্ঠুভাবে ও সুন্দর পরিবেশে তদন্ত করার সুযোগ দেওয়া হোক। ছাত্রদের ‘ভিসি গো ব্যাক’ স্লোগানের বিষয়ে তিনি বলেন, স্লোগান দেওয়ার অধিকার শিক্ষার্থীদের রয়েছে।তবে তিনি জানান, কোনও অসাংবিধানিক ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড ক্যাম্পাসে সহ্য করা হবে না।
ভিসির আহ্বানের পরও বেশিরভাগ ক্লাসই ছিলই ফাঁকা। দুয়েকটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পেরেছে। শিক্ষক ছাড়াও ক্যাম্পাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসের বাইরে অবস্থান করেন। অনেকে প্রতিবাদেও যোগ দেন।সোমবারও বিজেপি সমর্থিত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ‘দেশবিরোধী’ স্লোগানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
এদিকে, কংগ্রেস ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী জেএনইউর রাষ্ট্রবিরোধীদের সমর্থন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। রাহুলকে আক্রমণ করে নিজের ব্লগে অমিত শাহ লিখেছেন, আমি রাহুলকে জিজ্ঞেস করতে চাই তিনি কি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থণ দিয়ে দেশকে আরেকটি ভাগ করতে চান? জেএনইউতে যা ঘটেছে তাকে কোনওভাবেই জাতীয়তাবাদের সমর্থন বলা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেশবিরোধী স্লোগান ভারতীয়দের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। রাহুলের সমালোচনায় অমিত শাহ আরও লিখেছেন, আজকের ভারতে কেউ যদি হিটলারের মনোভাব পোষণ করে থাকে তাহলে তিনি হচ্ছেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেসের ডিএনএতে হিটলারের মনোভাব রয়েছে। রাহুলকে জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করারও আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, রবিবার সিপিআইএম-এর দিল্লির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের একে গোপালন ভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। দলীয় সাইনবোর্ডের বিকৃতির পাশাপাশি ইট-পাটকেলও নিক্ষেপ করা হয়। এছাড়া সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের পর এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ। দলটির দাবি, জেএনইউ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোতেই এই হুমকি দেওয়া হয়েছে।
ভারতের পার্লামেন্টে হামলার দায়ে দোষী সাব্যস্ত আফজাল গুরুর ফাঁসি কার্যকরের বিরুদ্ধে ৯ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ করার অভিযোগে কানহাইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এর নেপথ্যে ছিলেন বিজেপিপন্থী ছাত্রসংগঠন এবিভিপি ও বিজেপি সাংসদ মহেশ গিরি। এরপর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার।
/এএ/