কলকাতার কলেজ স্কোয়ার প্রাঙ্গণে সোমবার থেকে শুরু হলো বাংলাদেশ বইমেলা-২০২৩। এবার এই বইমেলা ১১তম বছরে পদার্পণ করল। কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন, বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি ঢাকার উদ্যোগে বই মেলা চলবে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এদিন বিকালে বই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয় ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। অন্যদের মধ্যে ছিলেন প্রকাশক ও লেখক ত্রিদীব চট্টোপাধ্যায়, সুধাংশু শেখর দে, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল সমিতির সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রতিদিন দুপুর ১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এই মেলা চলবে। ১০ দিনের এই মেলায় বাংলাদেশের ৬৫টি শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশগ্রহণ করছে। যাদের মধ্যে অন্যতম হলো অন্বেষা প্রকাশন, আহমেদ পাবলিশিং হাউস, মাওলা ব্রাদার্স, অনিন্দ্য প্রকাশ, নালন্দা, বাতিঘর, উজান, কথাপ্রকাশ, মাওলা ব্রাদার্স, দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, কাকলী প্রকাশনী প্রমুখ। এছাড়া বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে মেলা প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছে ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’ স্টল।
মেলায় বই বিক্রির পাশাপাশি প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকছে সেমিনার, কবিতা পাঠ এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। যেখানে অংশ নেবেন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা। সোমবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের শিল্পী ফরিদা পারভীন।
উল্লেখ্য, কলকাতায় ‘বাংলাদেশ বইমেলা’র যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে কলকাতার গগনেন্দ্র প্রদর্শনশালায়। পরপর তিন বছর সেখানে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১৪ সালে এই বই মেলা রবীন্দ্র সদনের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে স্থানান্তরিত হয়। আর সেই সময় থেকেই মেলায় যোগ হয় নতুন মাত্রা। শুধু বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সাংস্কৃতিক মিলনমেলায় পরিণত হয়। তিন বছর সেখানে এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১৭ সালে বইমেলা স্থানান্তরিত করা হয় মোহর কুঞ্জে। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার সেখানে এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে এই মেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ২০২২ সালে বই মেলার আসর বসে কলকাতার কলেজ স্কোয়ার প্রাঙ্গণে। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে এই বইমেলার আয়োজনের ফলে কলকাতায় বাংলাদেশের বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাংলাদেশের লেখকদের পরিচিতি বাড়ছে একই সঙ্গে বাংলাদেশের বইয়ের বাজারও প্রসারিত হচ্ছে।
মেলার উদ্বোধনের ফাঁকে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুও সেই দিকটি আলোকপাত করে বলেন, কেবল রাজনৈতিকভাবে নয়, সাংস্কৃতিকভাবেও এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় এই কারণে যে, বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বইমেলা কলকাতাতেও সাড়ম্বরে উদযাপন হয়। আমাদের দুই দেশের মধ্যে হয়ত কাঁটাতার, ভিসা, পাসপোর্ট আছে কিন্তু চিন্তায় বা মননে কোনও ফারাক নেই। আমাদের সংস্কৃতি খাদ্যাভ্যাস সবই এক। আমাদের যে জিনিসটি বিভাজন করা যায়নি সেটি হলো বই। তাছাড়া কলেজ স্ট্রিটের মতো একটি বইপাড়ায় এরকম একটি মেলা হওয়ার আমি সত্যি আনন্দিত।
আগামীদিনে এই কলেজ স্কোয়ার প্রাঙ্গণেই স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ বইমেলা করার ব্যাপারেও এক প্রকার নিশ্চয়তা দেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী। ব্রাত্য বসু বলেন, গত বছরও মেলা এখানে হয়েছে। এ বছরও এখানে হচ্ছে। তাই এটাই স্থায়ী জায়গা বলে ধরে নিতে হবে।
তার অভিমত, এখানে মেলা হলেই ভালো হয়। আগামী দিনেও এখানেই হবে। কলকাতা পৌরসভার থেকেও সবসময় সহযোগিতা পাবো বলে আশা করছি।
মফিদুল হক জানান, খুব ছোট আকারে কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজ তা বাড়তে বাড়তে পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে জায়গা করে নেওয়ার দাবি রাখে। এই বইমেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকাশকদের একটা ব্যাপ্তি ঘটছে। তাছাড়া এটি অপরের পরিপূরক। কারণ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশনা মিলেই বাংলার সাহিত্য, মননশীলতা, ইতিহাস চর্চা সবকিছুর মিলন ঘটে। ফলে এটা উভয়ের কাছেই উইন উইন সিচুয়েশন।
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, একটা সময় বাংলাদেশের প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন বাংলাদেশের লেখকদের বই কলকাতার মানুষ ততটা গ্রহণ করেন না। কিন্তু গত ১১ বছর ধরে সেই চিত্রটা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এর একটি কারণ হলো কলকাতার মাটিতে বাংলাদেশ বইমেলা, দ্বিতীয় কারণ কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন তৈরি।। এপারের বাঙালিদের কাছে বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কে অবহেলা ছিল। কিন্তু যখন থেকে বাংলাদেশের বই এপার বাংলায় আসতে শুরু করলো তখন থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে লাগলো। বাংলাদেশের বইয়ের প্রতি আগ্রহ, আকর্ষণ ও ভালোবাসা জন্মায়।