তিনবার হেরেও মোদির বিরুদ্ধে নির্বাচন করবেন কে এই অজয় রায়?

টানা তিনবার হেরেও চতুর্থবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে নির্বাচন করবেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় রায়। এই নির্বাচনের বিষয়েই জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডিডব্লিউ’র সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

মোদির বিরুদ্ধে ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনে হেরেছেন অজয় রায়। শুধু তাই না, ২০০৯ সালে মুরলী মনোহর জোশীর বিরুদ্ধেও হারেন তিনি। তবু আবার মোদির বিরুদ্ধে নির্বাচন করবেন কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোটের এই প্রার্থী।

গত বছর আগস্টে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হয়েছেন অজয় রায়। ফলে বারাণসী নয়, গোটা রাজ্যে কংগ্রেসের দায়িত্ব তার কাঁধে। কিন্তু সেখানে তিনবার হেরেছেন তিনি। তারপরও চতুর্থবারের জন্য এমন কঠিন নির্বাচনি লড়াইয়ে কেন নামতে রাজি হলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি? তিনি পাঁচবারের বিধায়ক হলেও লোকসভায় সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন এক লাখ ৫২ হাজার।

গতবার নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন তিন নম্বরে। সমাজবাদী পার্টির শালিনী যাদব ছিলেন দুই নম্বরে। এবার সমাজবাদী ও কংগ্রেস জোট হয়েছে। যদি গতবারের মতো এক লাখ ৫২ হাজার এবং সমাজবাদী পার্টির প্রায় দুই লাখ ভোটও পান তবু নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদির থেকে তিন লাখ ৭৪ হাজার ভোট পিছনে থাকবেন অজয়।

বিশেষ করে রামমন্দির উদ্বোধন হয়ে যাওয়ার পর লোকসভা ভোটে বাবা বিশ্বনাথের শহরে মোদির জনপ্রিয়তা কতটা তা একটু ঘুরলেই টের পাওয়া যায়। সামনে হারের হাতছানি সত্ত্বেও অজয় রায় বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রীর মোকাবিলায় ভোটের ময়দানে নামলেন কেন?

প্রশ্নটা শুনে দুই হাত জোড় করে আজয় রায় বললেন, আমি শুধু বারাণসীর কংগ্রেস নেতা নই। আমি উত্তর প্রদেশের সভাপতি। দলের কর্মী হিসেবে বড় দায়িত্ব পালন করতে হয়। দলের কর্মীদের মনোবল বজায় রাখাটা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, এবার লড়াইটা আলাদা হবে, দেখে নেবেন। মোদিজি এখানে যে কাজ করতে গেছেন তাতেই ব্যর্থ হয়েছেন। এবার তার ফল দেখবেন। ভোটের ফলাফল অন্যরকম হবে।

একসময় বিজেপি থেকেই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন অজয় রায়। বিধায়ক হয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পেরে দল ছাড়েন। সমাজবাদী পার্টির হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছেন। একবার নির্দল হিসেবে জিতেছেন। ফলে বিধানসভার একটা কেন্দ্রে তার প্রভাব আছে।

কিন্তু গত তিনবারের ফলাফল দেখলে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বিরোধীদের ভোট সব মিলিয়ে ওই সাড়ে তিন লাখ। আর নরেন্দ্র মোদির ভোট সমানে বাড়ছে। তার ওপর এবার মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি বারাণসীতে মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন।

অজয় রায় স্বীকার করে নিলেন, আমার ভোট কাটার জন্যই বিএসপির এখানে প্রার্থী দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ওরা ভোট কাটতে পারবে না। কারণ মানুষ বুঝতে পেরেছেন মায়াবতী বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। সেজন্য বিএসপি প্রার্থী ভোট পাবেন না।

ঘটনা হলো, এভাবেই কখনও আসাদুদ্দিন ওয়েইসি, কখনও বা অন্য কেউ মুসলিম ভোটে ভাগ বসিয়েছেন এবং কংগ্রেস, আরজেডি, সমাজবাদী পার্টির বাড়া ভাতে ছাই পড়েছে।

অজয় রায় দাবি করে বলেন, আপনারা বুঝতে পারছেন না, জিনিসপত্রের দাম এতটা বেড়ে গেছে, মানুষ অসম্ভব ক্ষুব্ধ। যুবকেরা চাকরি পাচ্ছেন না। মানুষ তাদের ক্ষোভ বাইরে দেখাতে চাইছে না। তারা ভোটের জন্য অপেক্ষা করছেন।

বারাণসীতেও জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে মানুষের ক্ষোভ আছে। কিন্তু তারপরও শহরের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই বলছেন মোদিই জিতবেন।

অজয় রায়ের বাড়ির বাইরে একটা ঘর আছে, ওটা রাহুল গান্ধীরও ঘর। সংসদ সদস্য পদ বাতিল হওয়ার পর রাহুলকে সরকারি বাড়ি ছেড়ে দিতে হয়। তখন কংগ্রেস এই প্রচার শুরু করে- ‘আমার ঘর, রাহুল গান্ধীরও ঘর।

কিন্তু ঘটনা হলো, গত দশ বছর ধরে এই বারাণসী নরেন্দ্র মোদিরও ঘর। সেই ঘরে তার শক্তি ক্রমশ বেড়েছে। এখানে অরবিন্দ কেজরিওয়াল এসেও দুই লাখের বেশি ভোট পাননি। সেখানে অজয় রায় চতুর্থবার কি সব হিসাব বদলে দিতে পারবেন?

অজয় বলন, বারাণসী আমার মাতৃভূমি, আমার জন্মভূমি, আমি কেমন করে তা ছেড়ে চলে যাবো? আমি আমার বারাণসীর মানুষের সঙ্গে আছি। আমি আমার মানুষের সঙ্গ ছাড়তে পারি না। আমি কাশীর সঙ্গে আছি।

বোঝা গেলো, হারের ভ্রুকুটি সত্ত্বেও কেন মোদির বিরুদ্ধে তৃতীয়বার বারাণসীতে লড়াই করছেন অজয় রায়।