নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন

উমর-অনির্বাণের জামিন শুনানি স্থগিত

দেশদ্রোহিতার মামলায় গ্রেফতার হওয়া দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) দুই ছাত্র উমর খালিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যের জামিন আবেদনের শুনানি শুক্রবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আদালত। দিল্লি পুলিশ ওই দুই শিক্ষার্থীর জামিনের তীব্র বিরোধিতা করে। এদিকে, এক উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ, অনির্বাণ ভট্টাচার্যসহ ৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রধান প্রোক্টর।

মঙ্গলবার দুই শিক্ষার্থী জামিন আবেদন করেন। বুধবার শুনানি শেষে বিচারক শুক্রবার পর্যন্ত তা স্থগিত রাখেন। জামিন আবেদনে উমর ও অনির্বাণ উল্লেখ করেন, একই অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া কানহাইয়া কুমার জামিন পেয়েছেন। তাছাড়া তাদের আর পুলিশ কাস্টডিতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের কোনও প্রয়োজন নেই। তাই তাদের জামিন পাওয়া উচিত।

এই দুই শিক্ষার্থীর জামিনের বিরোধিতা করে দিল্লি পুলিশ দাবি করে, কানহাইয়া কুমারের চাইতে এই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক মারাত্মক। আদালতে পুলিশ জানায়, যে অনুষ্ঠানে দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছিল সেই অনুষ্ঠানের আয়োজক এই দুজন। ৯ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান কানহাইয়া কুমার আয়োজন করেননি। কানহাইয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের চাইতে এদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পার্থক্য রয়েছে। তাই এদের জামিন দেওয়া যায় না।

এদিকে, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) এক উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ক্যাম্পাসে ৯ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ, অনির্বাণ ভট্টাচার্যসহ ৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ওই সুপারিশ কার্যকর হবে কি না, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন উপাচার্য এম জগদীশ কুমার ও চিফ প্রোক্টর এ ডিমরি।

সোমবার উপাচার্যের সভাপতিত্বে হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের বৈঠকে তদন্ত কমিটির পেশ করা প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা হয়। তার ভিত্তিতে ২১ জন শিক্ষার্থীকে ‘কারণ দর্শানোর’ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কানহাইয়া, উমর এবং অনির্বাণও রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-রীতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে ওই ২১ জনের বিরুদ্ধে।

অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা ওই তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং প্রতিবেদনটি জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন।

৯ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের স্বাধীনতাপন্থী হিসেবে পরিচিত আফজাল গুরুর ফাঁসির বিরোধিতা করে বিতর্কিত অনুষ্ঠান আয়োজন ও তাতে দেশবিরোধী বক্তব্য ও স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এরপর দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতি বামপন্থী ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমারকে।

ওই দিনই আত্মগোপনে যান উমর খালিদ ও অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়। ২২ ফেব্রুয়ারি তারা ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন। নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় তারা আত্মগোপনে গিয়েছিলেন বলে মিডিয়ায় জানান। পরে আদালতের নির্দেশে ২৩ ফেব্রুয়ারি উমর খালিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে এসে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। চলতি মাসের ২ তারিখ দিল্লির হাইকোর্ট কানহাইয়ার ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু উমর এবং অনির্বাণ এখনও জেলে বন্দি রয়েছেন। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

/এএ/বিএ/