শতাধিক নিহতের পরও ভারতের মন্দিরে নিষিদ্ধ হচ্ছে না আতশবাজি

ভারতের কেরালায় একটি মন্দিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১০ জন নিহত হওয়ার পরও মন্দিরে আতশবাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ হচ্ছে 51762187.cmsনা। ওই মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। সোমবার ভারতের সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার রাজধানী থিরুভানান্তাপুরমের ৬০ কিলোমিটার দূরবর্তী কোল্লাম জেলার পারাভর পুত্তিঙ্গাল দেবি মন্দিরে বিশু উৎসবের আয়োজন করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার মালায়ালাম পঞ্জিকা অনুযায়ী, শুরু হবে নতুন বছর। আর কেরালায় নতুন বছর উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী বিশু উৎসব পালন করা হয়। বিশু উৎসবের প্রধান দিক হলো আলোকসজ্জা ও আতশবাজির প্রদর্শনী।
রবিবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে আতশবাজির প্রদর্শনী চলাকালে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ১১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় চারশো জন।
এ সংক্রান্ত আরও খবর: কেরালায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১২
এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর চারিদিক থেকে আতশবাজি নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। তবে কেরালার অন্যতম প্রভাবশালী মন্দির কর্তৃপক্ষ ট্রাভানকোর দেভাস্বোম বোর্ড, আতশবাজির প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করবে না বলে জানিয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১২শ’রও বেশি মন্দির। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনও পরিস্থিতিতেই আতশবাজির প্রদর্শনী বন্ধ করা হবে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব।

ওই মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের পরপরই মন্দিরের কর্মকর্তারা পালিয়ে যান। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশের একটি তদন্ত দলকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আতশবাজির প্রদর্শন নিষিদ্ধের কথা না বললেও কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ওম্মেন চান্দি জানিয়েছন, ‘প্রতিযোগীতামূলক আতশবাজি’ প্রদর্শনীর অনুমতি ছিল না মন্দিরটির।

এ সংক্রান্ত আরও খবর: ঘটনাস্থলে মোদি, উধাও মন্দির কর্তৃপক্ষ

মন্দিরের কাছাকাছি বাস করা এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ওই মন্দিরের আতশবাজি প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করেছিল। নিষিদ্ধ থাকার পরও পুলিশ কেন আতশবাজি প্রদর্শনী বন্ধ করে দিলো না এমন প্রশ্নের উত্তরে কেরালার গৃহমন্ত্রী রমেশ চেন্নিলাল বলেন, ‘যখন লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়, তখন পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নিতে গেলে আরও সমস্যা তৈরি হতে পারে।’

এদিকে, পুত্তিঙ্গাল মন্দিরে আতশবাজির দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদার, মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্যসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে আটক করেছে।

এর আগে মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চণ্ডি  জানান, মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকের পর বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি ৬ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন পেশ করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

রবিবার (১০ এপ্রিল) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীসহ কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

আরও পড়ুন: নারীরা মন্দিরে গেলে ধর্ষণ বাড়বে!

উল্লেখ্য, অগ্নিকাণ্ডের সময় ওই মন্দিরে উৎসবকে ঘিরে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মন্দিরে রাতভর বাজি ফাটছিল। হঠাৎ বাজির আগুনের ফুলকি গিয়ে পড়ে মন্দির চত্বরে জমা করে রাখা আতশবাজির স্তূপে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা মন্দির ও মন্দির চত্বরে। আতঙ্কিত মানুষেরা পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। কিন্তু ততোক্ষণে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে মন্দিরের ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে।  

বিমানবাহিনীর চারটি হেলিকপ্টারও উদ্ধারকাজে যোগ দেয়। বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী, পুলিশ এবং দমকল দমকল কর্মীরা কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। সূত্র: দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

/এসএ/এএ/