২০ হাজারে মঞ্জুর ২০টি আবেদন, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বন্ধ জাপানের দরজা

প্রায় ২০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন বাছাই করে মাত্র ২০ জনকে আশ্রয় নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে জাপান। এতো অল্প সংখ্যক আবেদন মঞ্জুর করায় হতাশ আশ্রয়প্রার্থীরা। তারা মনে করছেন, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য জাপানের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যাদের সত্যি আশ্রয় দরকার তাদের সঙ্গে জাপান অন্যায় করেছে। তবে জাপান সরকারের দাবি, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য দেওয়া বিশেষ সুবিধার অপব্যবহার করা হচ্ছিল।

রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন মঞ্জুর করছে না জাপান

২০১৭ সালে ১৯ হাজার ৬২৮ টি আবেদনের মধ্যে মাত্র ২০ টি আবেদন মঞ্জুর করেছে জাপানের সরকার। রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা এতে ক্ষুব্ধ। এদের মধ্যে এমন প্রার্থীও আছেন যিনি সাত বছর ধরে আইনি লড়াই করেও নিবন্ধন পাননি।

২০১০ সাল থেকে জাপান রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে আসছিল। যতদিন আশ্রয় প্রার্থীদের আবেদন যাচাইবাছাই শেষ না হচ্ছে ততদিন দেশটিতে কাজ করার জন্য তাদেরকে ‘ওয়ার্ক পার্মিট’ দিতো সরকার। কিন্তু এখন জাপান বলছে, এই সুযোগের অপব্যবহার করা হয়েছে। যারা সত্যিকার উদ্বাস্তু নয়, তারাও কাজের সুযোগ পেতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছে। এই আবেদনগুলো ‘ভুয়া’।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালে গত বছরের তুলনায় জাপানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে ৮০ শতাংশ। যে কয়েক হাজার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে তাদের একজন জিন-ক্লউড হিতিমানা। বুরুন্ডির জাতিগত সংঘাত চলাকালে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন তিনি। সাত বছর ধরে ঝুলে আছে তার আশ্রয় পাওয়ার  বিষয়টি। আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জাপানের কঠোরতা ও অভিবাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে তিনি এখনও বৈধতা পাননি।

হিতিমানা হুতু সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন। তুতসিরা তাকে জ্বলন্ত টায়ারের আগুনে ফেলে দিয়েছিল। নিজের ডান পায়ের পোড়া দাগ তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় সেই বিভীষিকার কথা। তার আইনজীবী মাসাকো সুজুকি মন্তব্য করেছেন, সরকারের নীতি প্রকৃত আশ্রয়প্রার্থীদেরও বঞ্চিত করছে।

সম্প্রতি জাপান আশ্রয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি বাড়িয়েছে। থাকার মেয়াদ শেষ হওয়া মাত্রই দ্বিতীয়বার আবেদনকারী ও প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়া আবেদনকারীদের সোজা ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

‘জাপান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিফিউজিস’র প্রধান ইরি ইশিকাওয়া বলেছেন, নতুন নিয়ন্ত্রণবিধি আসলে রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সরকারের অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নেওয়া সার্বিক পরিকল্পনার অংশ। সরকার মনে করে, যারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন, তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জাপানে কাজ করার জন্য থাকতে চাইছেন।

ইশিকাওয়াদের সংগঠন প্রায় ৭০০ আশ্রয় প্রার্থীকে নিয়ে কাজ করছে। আবেদন প্রত্যাখাত হওয়া এসব আশ্রয়প্রার্থীরা মূলত আফ্রিকা থেকে জাপানে গিয়েছে। ইশিকাওয়া জানিয়েছেন, ডিটেনশন সেন্টারগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। সেখানে কতদিন পর্যন্ত কাউকে আটক করে রাখা হবে তার কোনও নির্দিষ্ট সীমা নেই। অনেককে এক বছরও আটকে রাখা হয়।

ইশিকাওয়ার মতে, ৪৪ বছর ধরে কর্মক্ষম জনবলের ঘাটতি থাকার পরও জাপানের অভিবাসী বিরোধী এই মনোভাবের পেছেনে রয়েছে সংস্কৃতিগত প্রতিরোধের মানসিকতা। যদিও জাপানের সাধারণ নাগরিকদের সহায়তার মানসিকতাকে অতুলনীয় বলে মনে করেন আশ্রয়প্রার্থী হিতিমানা।