ভেনেজুয়েলায় লকডাউনে গরুর রক্তের স্যুপ খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা

ভেনেজুয়েলায় করোনা লকডাউন জারি হওয়ার পর থেকেই চরম দরিদ্র মানুষেরা পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সান ক্রিস্টোবালের কসাইখানায় লাইন ধরে দাঁড়াচ্ছেন। লকডাউন সংকটে একমাত্র বিনামূল্যে যে প্রোটিন পাওয়া যাচ্ছে তা সংগ্রহ করতে জড়ো হচ্ছেন তারা। আর তা হচ্ছে গরুর রক্ত। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর জানিয়েছে।

vene

মেকানিক আলেইয়ার রোমেরো (২০) প্রতি সপ্তাহে দুইবার যান কসাইখানায়। স্থানীয় একটি গ্যারেজে কাজ করলেও লকডাউনের পর তা হারিয়েছেন। সরকারের ত্রাণ খুব ধীরে পৌঁছায় মানুষের কাছে। কফির একটি কাপে কসাইখানা থেকে দেওয়া রক্ত হাতে নিয়ে তিনি বলেন, যে খাবার পাওয়া যাচ্ছে তা আমি সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি।

গরুর রক্ত ভেনেজুয়েলার ঐতিহ্যবাহী পিশন স্যুপের একটি উপাদান। প্রতিবেশী কলম্বিয়াতেও কোভিড-১৯ সংকট শুরু হওয়ার মানুষ এর প্রতি ঝুঁকছেন আরও বেশি। অবশ্য গর্বিত মাংসাশী জাতি হিসেবে মাংসের বদলে রক্ত খেতে হচ্ছে বলে অনেকেই খুশি নয়। যদিও এক কেজি গরুর মাংসের দাম ন্যূনতম মজুরির দ্বিগুণ।

সান ক্রিস্টোবাল কসাইখানায় প্রতিদিন ৩০-৪০ জন মানুষ লাইন ধরে গরুর রক্ত নিতে আসেন বলে জানিয়েছেন এককর্মী। তিনি জানান, মহামারির আগে এসব রক্ত ফেলে দেওয়া হতো।

কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়া বাউদিলিও চাকন নামের এক নির্মাণশ্রমিক বলেন, আমরা ক্ষুধার্ত। আমরা চার ভাই ও দশ বছরের এক ছেলে আছে। আমরা সবাই রক্তের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছি।

ভেনেজুয়েলায় গরুর রক্ত খাওয়া বেড়ে যাওয়াতে দেশটির অবনতিশীল অর্থনীতিতে অনাহারর প্রকাশ। মূল্যস্ফীতিতে গত ছয় বছর ধরে এমনিতেই সংকটে রয়েছে দেশ। এরপর মহামারিতে এই সংকটের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।

সরকারিভাবে ঘোষিত ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বিভিন্ন ইউরোপের দেশের তুলনায় কম। তবে অর্থনীতি স্থবির হওয়া এবং সরকারি ত্রাণ কর্মসূচির ধীর গতির কারণে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেশি। সরকারি তথ্য অনুসারে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। অবশ্য সমালোচকরা বলছেন, সত্যিকার সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

করোনা প্রাদুর্ভাবের আগেই জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছিল, বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটে থাকা দেশের একটি ভেনেজুয়েলা। ২০১৯ সালে সংস্থা জানিয়েছিল ৩ কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত ৯৩ লাখ মানুষের পর্যাপ্ত খাবার নেই। ফলে অভিবাসী হয়েছেন ৫০ লাখ মানুষ।