আইএসের দখলকৃত খ্রিস্টানদের শহরে ইরাকি বাহিনীর হামলা

nonameইরাকের মসুলের কাছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর দখলে থাকা খ্রিস্টান অধ্যুষিত কিরকুক শহরে হামলা চালিয়েছে ইরাকি বাহিনী। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় এই হামলা চালায় ইরাক। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশ কার্টার ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদির সঙ্গে দেখা করতে বাগদাদ পৌঁছেছেন। এই সফরকে সামনে রেখেই সোমবার থেকে স্থল ও বিমানপথে মার্কিন যৌথ বাহিনীর সহায়তায় এই অভিযান চালানো হয় বলে খবরে বলা হয়েছে।

ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি শুক্রবার রাতে সেনা ব্রিগেডকে কিরকুকে জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন।  শুক্রবার থেকে কিরকুকে মোট ৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এদের মধ্যে চার জন ইরানি কারিগরও রয়েছেন যারা নগরীর একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করছিলেন। তবে এই পরিসংখ্যানে যুদ্ধে মৃত বা আত্মঘাতী জঙ্গিদের সংখ্যা যুক্ত করা হয়নি। 

সাদ্দাম হোসেন কিরকুকের নৃগোষ্ঠীগত বৈচিত্র ছিন্ন করেন ও কুর্দিদের বদলে আরবদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হন। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে অ্যাসিরিয়ান খ্রিস্টানরা অনেকেই এখনও সেখানে রয়ে গিয়েছেন। 

ইরাকি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইরাকি বাহিনী কারাকুশ শহরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। এই শহরটি ২০১৪ সাল থেকে আইএসের অধীনে রয়েছে। ইরাকি বিশেষ বাহিনী সপ্তাহখানেক আগে কারাকুশের উত্তরে বারটেলা গ্রাম দখল করে। 

মসুলের এই অভিযান ২০০৩ সালের পর থেকে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ইরাকের সেনাবাহিনী দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকেও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ উত্তর ও পূর্ব দিক রয়েছে কুর্দি যোদ্ধাদের অধীনে।

শুক্রবার রয়টার্সের আলোকচিত্রীদের পাঠানো ছবিতে আইএস অধ্যুষিত কায়য়ারা শহর থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি ও বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হতে দেখা যায়।  জঙ্গিরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে নাকি নিজেদের আড়াল করার উদ্দেশ্যে ধোঁয়া তৈরি করে রেখেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম কার্যালয় জানায়, সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত ৫০টি গ্রাম পুনর্দখল করা হয়েছে। মসুল পুনরুদ্ধারের  প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এদিকে কার্টারের সফর সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেন,  ‘এই অভিযান মাত্র শুরু হলো। অভিযানটি জটিল হলেও জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’

এর আগে শুক্রবার তুরস্ক সফরে এই অভিযানে তুরস্কের সমর্থন সম্পর্কে ইঙ্গিত দেন কার্টার। বাগদাদ ও আঙ্কারার যৌথ প্রয়াসে সংকট নিরসনের সম্ভাবনার কথা জানান তিনি।

বর্তমানে ইরাকে ৫ হাজার মার্কিন সেনা সদস্য নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে অন্তত ১০০ জনই যৌথ বাহিনীর উপদেষ্টা ও সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করছেন। 

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর প্রধান পেটি অফিসার জেসন ফিনান ইরাকের উত্তরাঞ্চলে রাস্তার পাশে এক বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন। এই অভিযানে এই প্রথম যৌথ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে কেউ নিহত হলেন। আর শুক্রবার কিরকুকে হামলা চালানোর মধ্যে দিয়ে প্রতিশোধ নেয় জঙ্গিরা। কিরকুক কর্তৃপক্ষ এই জঙ্গি হামলার কথা ঘোষণা করে কারফিউ জারি করেছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, জঙ্গিরা একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়েছে।

কিরকুক নগরীটি মসুল ও বাগদাদের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং তেলের জন্য প্রসিদ্ধ। সূত্র: রয়টার্স।

/ইউআর/এএ/