উপসাগরীয় দেশগুলোর ‘উদ্বেগে’র কথা শুনতে রাজি কাতার

s4.reutersmedia.netউপসাগরীয় যেসব আরব দেশ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছে তাদের উদ্বেগের কথা শুনতে রাজি আছে কাতার। চলমান এ কূটনৈতিক সংকটে মধ্যস্ততাকারী দেশ কুয়েতের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স রবিবার এ খবর জানিয়েছে।

গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সংকট সমাধানের চেষ্টা করছে কুয়েত। কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কুনা কাতারের এ রাজি হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

জঙ্গিবাদে সমর্থন ও মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে গত ৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে কাতারের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ওই দিনই আরও দু’টি দেশ– ইয়েমেন ও মালদ্বীপ দেশটির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে। তবে কাতার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘কাতারের ভাইয়েরা যে তাদের ভাইদের (সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী দেশ) উদ্বেগ ও আশঙ্কার কথা শুনতে রাজি আছে বলে কাতার নিশ্চিত করছে। নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য কাতার রাজি।’

কুয়েত জানিয়েছে, উপসাগরীয় দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করাই তাদের লক্ষ্য।

অবশ্য এর আগে কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমদ আল-জাবে আল-সাবাহ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মধ্যে মধ্যস্ততার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে ব্যর্থ হয়।

কাতারের আলোচনায় বসতে রাজি হওয়ার বিষয়টি কুয়েতের পক্ষ থেকে জানানোর পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনওয়ার গারগাশ টুইটারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আলোচনায় কাতারের রাজি হওয়াকে তিনি জ্ঞানী ও যৌক্তিক চিন্তার শুরু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংকট শুরু হওয়ার পর বলেছিলেন কাতারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলোকে নিয়ে হোয়াইট হাউসে আলোচনায় বসতে আগ্রহী তিনি। কিন্তু শুক্রবার ট্রাম্প নিজের অবস্থান পাল্টে সন্ত্রাসবাদের বড় ধরনের পৃষ্ঠপোষক বলে আখ্যায়িত এবং সম্পর্কচ্ছেদকারী দেশগুলোর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ জানায়, দেশটির প্রভাবশালী উপ-যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমান সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের সঙ্গে রবিবার কথা বলেছেন। আর শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু’র ফোনে কথা বলেছেন। চলমান সিরিয়া সংকট ও কাতারের সঙ্গে আরব দেশগুলোর বিরোধ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে।

র আগে শুক্রবার টিলারসন সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলোকে কাতারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। টিলারসন বলেছিলেন, এর ফলে মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে যাচ্ছে এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের লড়াই প্রভাবিত হচ্ছে।

টিলারসনের এ আহ্বানের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইস্তানবুলে ইফতার পরবর্তী এক নৈশভোজে বলেন, এই অবরোধ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা উচিত।

তুরস্ক প্রতিক্রিয়া জানালেও অবরোধ আরোপ করা দেশগুলো টিলারসনের আহ্বান নিয়ে মৌনতার পথ অবলম্বন করছে। তবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমিরাতের পক্ষ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুক্রবারের বক্তব্যকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

কিন্তু কাতারের এক কূটনীতিক নাম না প্রকাশের শর্তে রয়টার্সকে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের এ কূটনৈতিক সংকট মার্কিন নেতৃত্বের অযোগ্যতার প্রমাণ।  তিনি বলেন, উপসাগরীয় মার্কিন ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই সংকট। এটা অন্যদের দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হয় তা যুক্তরাষ্ট্র জানে না বা সক্ষমতা নেই। সূত্র: রয়টার্স

/এএ/