কাতার সংকটে বিভক্ত বিশ্ব

8681457_web1_8681457-344de89b1e10470ebd2bd9cec7b26dd9কাতারের চলমান কূটনৈতিক সংকট মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর মধ্যকার বিভক্তিকে সামনে নিয়ে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যের সেই বিভক্তি এবার বিভক্ত করেছে সারা বিশ্বকে। কাতারকে নিয়ে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় মিত্রদের অবস্থানে সরাসরি নিজের কৃতিত্ব দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের দৃশ্যমান অবস্থান এই সংকট নিরসনের পক্ষে। সংকটের শুরু থেকেই তুরস্ক অবস্থান নিয়েছে কাতারের পক্ষে। সংকট সমাধানে আলোচনার আহ্বান জানালেও দোহার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে রাশিয়া। সংকটে জার্মানির ঝোঁকও তুরস্কের পক্ষে, এ সংকট যুদ্ধে গড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা। দোহার পাশে রয়েছে ভারতও।

গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জঙ্গিবাদে সমর্থন ও মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে গত ৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে কাতারের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ওই দিনই আরও দু’টি দেশ– ইয়েমেন ও মালদ্বীপ দেশটির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে। তবে কাতার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংকট শুরু হওয়ার পর বলেছিলেন কাতারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলোকে নিয়ে হোয়াইট হাউসে আলোচনায় বসতে আগ্রহী তিনি। কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের কৃতিত্বও দাবি করেছিলেন তিনি। আর শুক্রবার ট্রাম্প নিজের অবস্থান পাল্টে কাতারকে সন্ত্রাসবাদের বড় ধরনের পৃষ্ঠপোষক বলে আখ্যায়িত এবং সম্পর্কচ্ছেদকারী দেশগুলোর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ জানায়, দেশটির প্রভাবশালী উপ-যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমান সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের সঙ্গে রবিবার কথা বলেছেন। আর শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু’র ফোনে কথা বলেছেন। চলমান সিরিয়া সংকট ও কাতারের সঙ্গে আরব দেশগুলোর বিরোধ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার টিলারসন সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলোকে কাতারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। টিলারসন বলেছিলেন, এর ফলে মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে যাচ্ছে এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের লড়াই প্রভাবিত হচ্ছে।

টিলারসনের এ আহ্বানের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইস্তানবুলে ইফতার পরবর্তী এক নৈশভোজে বলেন, ‘এই অবরোধ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা উচিত।’ এর আগে তুরস্কের পার্লামেন্ট কাতারে সেনা পাঠানোর একটি প্রস্তাব পাস করেছে।

তুরস্ক প্রতিক্রিয়া জানালেও অবরোধ আরোপ করা দেশগুলো টিলারসনের আহ্বান নিয়ে মৌনতার পথ অবলম্বন করছে। তবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমিরাতের পক্ষ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুক্রবারের বক্তব্যকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ছয় আরব দেশের স্থল, নৌ ও বিমান অবরোধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। চলমান সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। শনিবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কো-তে কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রাহমান আল থানি-র সঙ্গে বৈঠকের পর এ আহ্বান জানান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

Gulf-crisis

বৈঠকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাতারি মন্ত্রীকে বলেন, ‘রাশিয়ার নীতি হচ্ছে আমরা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ কিংবা অন্য কোনও দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। কিন্তু আমাদের অংশীদারদের মধ্যে যখন সম্পর্কের ব্যাঘাত ঘটে সেটা আমাদের জন্য সুখকর নয়। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো আগ্রহী হলে তাদের সম্মতিতে সংকট নিরসনে মধ্যস্থতা করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’

সের্গেই ল্যাভরভ আরও বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এর একদিন আগেই কাতারের ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি। শুক্রবার কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রাহমান আল থানি-র সঙ্গে বৈঠকের পর এ আহ্বান জানান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল। জার্মানিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিদ্যমান সংকট নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন সিগমার গ্যাব্রিয়েল। তিনি বলেন, ‘আরব দেশগুলোর কাতারকে একঘরে করে ফেলা একটা সম্মিলিত শাস্তি। এই অবরোধ আন্তর্জাতিক আইনের পরিষ্কার লঙ্ঘন।’

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা উচিত। এ বিষয়ে আমাদের মার্কিন সহকর্মী এবং এ অঞ্চলের সব সহকর্মীদের কথা বলতে হবে। আমাদের অবশ্যই সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে কাতারের নৌ এবং বিমানসীমায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।’

এর আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর এ সংকট যুদ্ধে গড়াতে পারে সতর্ক করেছিলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরান ও কুয়েতের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।

ফ্রান্সও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা জানালেও তাদের অবস্থান কাতারের পক্ষেই রয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ অবরোধ আরোপকারী দেশগুলোকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার ম্যাক্রোঁ কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি, সৌদি বাদশা সালমান, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানির সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন।

কাতারের কূটনৈতিক সংকটে নজর রাখছে ভারত। শুরুতেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছিলেন, এটি আরব বিশ্বের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু এই ঘটনার জের ধরে কোনও ভারতীয় সমস্যায় পড়লে সাহায্য করবে দিল্লি। মালয়েশিয়াও আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর-

কাতারের নাগরিকদের মক্কার মসজিদ-আল হারামে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ

ওমানে দুটি যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে ইরান

উপসাগরীয় দেশগুলোর ‘উদ্বেগে’র কথা শুনতে রাজি কাতার

কাতার সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক ফোনালাপ

কাতারের জন্য খাদ্য পাঠালো ইরান

ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবে আগ্রহী নয় কাতার

ইরান থেকে কাতারকে দূরে থাকতে বললো বাহরাইন

কাতারের কূটনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী রাশিয়ান হ্যাকাররা!

কাতারে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত তুরস্কের

কাতারের পক্ষে কথা বললে ১৫ বছরের জেল

/এএ/