আল আকসায় ইসরায়েলের পিছু হটায় ফিলিস্তিনিদের উল্লাস

যে সড়কটি গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রতিবাদের ক্ষেত্র ছিল সেখানেই মধ্যরাতে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি জড়ো হয়ে উল্লাস করেছেন। আল আকসার প্রবেশ পথে ইসরায়েলের স্থাপিত বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রত্যাহারে এই উল্লাসে মেতে উঠেন ফিলিস্তিনিরা।

2017_7_27-Palestinains-celebrate-the-removal-of-security-measures-palced-on-al-aqsa20170727_2_24960174_24478509

সামাজিক মাধ্যম ও টেলিভিশনে আল আকসার প্রবেশ পথ থেকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সরিয়ে নেওয়ার খবর প্রকাশের পরই ফিলিস্তিনিরা জড়ো হতে শুরু করেন। ইসরায়েলের দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের বিভিন্ন এলাকার ফিলিস্তিনিরা আল আকসা মসজিদের লায়ন্স গেট-এ জড়ো হয়ে বিজয় উদযাপন করেন।

আল আকসার প্রবেশ পথ থেকে মেটাল ডিটেক্টর সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল ইসরায়েল। বুধবার রাতে নজরদারি ক্যামেরা ও লোহার ব্যরিকেড প্রত্যাহার করে।

মেটাল ডিটেক্টর বসানোর মসজিদের প্রবেশ পথেই বিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রত্যাহারের পর তা আগের স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রত্যাহার নিয়ে ইসরায়েল কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার সকালের দিকে দেশটি জানিয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরির জন্য ২৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে।

ইসরায়েলের পিছু হটা উদযাপনে অংশ নিয়েছেন প্রবীন ধর্মীয় নেতারা। তারা প্রতিবাদকারীদের উদ্যমের প্রশংসা করেন। তবে তারা সতর্ক করে জানিয়েছেন, সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করার বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মসজিদের ভেতরে প্রবেশ না করার জন্য।

ইমাম ইউসুফ আবু স্নেইনাহ বলেন, পরিস্থিতি এখন ভাল। আল্লাহর ইচ্ছায় মসজিদ খোলা থাকবে। আমরা এখন রাস্তায় নামাজ আদায় করব। আল্লাহর মর্জি হলে রাতের নামাজ আমরা মসজিদের ভেতরে আদায় করব।

আতশবাজি পুড়িয়ে এবং চক্রাকারে গান গেয়ে ও নেচে উদযাপনে অংশ নেয় ফিলিস্তিনিরা।

আদনান নামের ৫৮ বছরের ব্যক্তি জানান, প্রতিটি বিপ্লব শুরু হয় জনগণ থেকে, সরকার থেকে নয়। আপনি এটাকে একটি বিপ্লব বলতে পারেন। এমনকি এটা আরব সরকারগুলোর বিরুদ্ধে বিপ্লব।

মধ্যরাতে এত বেশি সংখ্যক ফিলিস্তিনিকে কখনও উল্লাস করতে দেখেননি জানিয়ে আদনান আরও বলেন, নেতানিয়াহু আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। মসজিদ বন্ধ হওয়ার পর মানুষ বুঝতে পেরেছিল কিছু একটি নেই। এমনকি যারা নামাজ পড়তেন না তারাও বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।

2017_7_27-Palestinains-celebrate-the-removal-of-security-measures-palced-on-al-aqsaimage3

১৪ জুলাই আক আকসার সামনে বন্দুকধারীর হামলায় দুই ইসরায়েলি পুলিশ ও তিন সন্দেহভাজন নিজত হওয়ার পর ইসরায়েল মেটাল ডিটেক্টর ও অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থাপন করে। নিহত সন্দেহভাজনদের তিনজনই ছিলেন আরব-ইসরায়েলি। ইসরায়েলের পুলিশের দাবি, নিহতরা মসজিদের ভেতরে অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিল।

মেটাল ডিটেক্টর স্থাপনের পর ধর্মীয় নেতারা মসজিদে প্রবেশে অস্বীকৃতি জানান। তারা দাবি করেন, এর মধ্য দিয়ে সহাবস্থানের নীতি ভঙ্গ করা হয়েছে। যে সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের প্রার্থণার সুযোগ রাখা হয়েছে। ধর্মীয় নেতারা মসজিদের প্রবেশ পথ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।

শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকার পরও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিরাপত্তা ব্যবস্থা অটুট রাখেন। এছাড়া শুক্রবার জুমার নামাজে ৫০ বছরের কম বয়সীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

শুক্রবার প্রতিবাদকারী ফিলিস্তিনিরা সড়কে জুমার নামাজ আদায়ের পর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। শুক্র ও শনিবারের সংঘর্ষে চার ফিলিস্তিনি নিহত হন। এই সময়ে পশ্চিম তীরে ছুরিকাঘাতে তিন ইসরায়েলি নিহত হন বলে দাবি করেছে তেল আবিব। এই অবস্থায় আরেক শুক্রবারের জুমার নামাজের আগেই সমধানের চাপ ছিল ইসরায়েলের ওপর।

আল আকসার প্রবেশাধিকার সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইসরায়েল জেরুজালেমের পুরান শহর নিয়ন্ত্রণ করছে। এই মসজিদ ইহুদিদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। ইহুদিরা আল আকসাকে টেম্পল মাউন্ট হিসেবে ডাকে। সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর।

/এএ/