‘জেরুজালেম ইস্যুতে শুধু মুখেই প্রতিবাদ জানাবে আরব বিশ্ব’

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দিলে বিপাকে পড়বে আরব দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র তাদের কৌশলগত মিত্র। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল বেশিরভাগ আরব দেশ। তাই যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া আন্দোলনে রূপ না নেওয়া পর্যন্ত তারা তেমন কিছুই করবে না। ফলে আরব দেশগুলোর কাছ থেকে কার্যকর প্রতিক্রিয়া আশা করলে ফিলিস্তিনকে হতাশ হতে হবে। দেশগুলো শুধু মুখেই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাবে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য ইসরায়েল পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে।

noname

ট্রাম্পের ঘোষণায় জেরুজালেমের ইসরায়েলি রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির আশঙ্কায় ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ মালিকি আরব লীগ এবং ইসলামি সংস্থা ওআইসিকে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। এসময় তিনি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের এমন  পদক্ষেপের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও আহ্বান জানান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো গুরুত্বপূর্ণ আরব দেশ সৌদি আরব, মিসর, এমনকি জর্ডানও যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। তাই তারা জেরুজালেম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশেই থাকবে। নিজেদের জাতীয় স্বার্থেই তারা ট্রাম্প-আরব মিত্রতা বজায় রাখবে। তাই এসব দেশে কঠিন আন্দোলন না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সরকার মুখেই প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাবে।

হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ গ্রাবিয়েল বেন-দোর বলেন, ‘ট্রাম্প দূতাবাস না সরানো পর্যন্ত তারা (আরব দেশগুলো) বাধা দেওয়ার কথা বলবে উচ্চকণ্ঠে। তবে কয়েকদিন পরই তারা এটা মেনে নেবে।’ তিনি আরও বলেন,  ‘এটাকে ট্রাম্পের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা হিসেবেই ধরে নেবে তারা। মৌখিক প্রতিবাদের বেশি কিছু করবে না তারা।’

তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়ান সেন্টারের সৌদি গবেষক ব্রান্ডন ফ্রেইডম্যানের মতে, সৌদি আরবের মাধ্যমেই ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে রাজি করানোর চেষ্টা করবে ওয়াশিংটন। তিনি বলেন, ‘সৌদি যুবরাজ ও ট্রাম্পের জামাতা কুশনারের বৈঠকের খবরটি সত্য হলে ধরে নিতে এ ইস্যুতেই তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এ নিয়ে কথা বলতে গেলে ক্ষোভের মুখে পড়বে।’  

ফ্রেইডম্যান বলেন, ‘সৌদি আরবকে ফিলিস্তিন ইস্যুর আগে নিজের স্বার্থ রক্ষায় মনোযোগ দিতে বলা হতে পারে। সৌদির প্রধান স্বার্থ হলো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানো। এজন্য ওয়াশিংটনকে তাদের পাশে দরকার। ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে বলেও আশা সৌদির। ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে বাধা দেওয়ার চেয়ে এটাই তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

ফ্রেইডম্যান আরও বলেন, ‘সৌদি আরব ফিলিস্তিনকে এভাবে এড়িয়ে যাবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলো জানা দরকার।’

এদিকে জর্ডানের প্রতিক্রিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের উপর তাদের নির্ভরতার কারণে কমে যাবে। জর্ডান টাইমসের কলাম লেখক দাউদ কুত্তাব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে ইসরায়েলের স্বীকৃতি দিলে জর্ডানের পেশাজীবী সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও মুসলিম ব্রাদারহুডের ডাকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে। পার্লামেন্টের পক্ষ থেকেও জোরালো বিবৃতি দেওয়া হবে।’

তবে এ বিবৃতি দেওয়ার পরে তাদের আর কিছুই করার নেই জানিয়ে দাউদ কুত্তাব বলেন, ‘আমার মনে হয় না তারা যুক্তরাষ্ট্র বিষয়ে তেমন কিছু করতে পারবে। কারণ অর্থনৈতিক সহায়তার কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে দরকার জর্ডানের। তবে পবিত্র জেরুজালেমের জিম্মাদার কারণে তারা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবে।’