দুই পা হারানো পঙ্গু ফিলিস্তিনিও রক্ষা পেলেন না ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলি থেকে

নিহত হওয়ার দুই দিন আগে ইব্রাহিম আবু থুরাইয়াহ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রতি একটি ভিডিও বার্তা রেকর্ড করেছিলেন।

২০০৮ সালে ইসরায়েলের বিমান হামলায় দুই পা ও একটি কিডনি হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যান আবু থুরাইয়াহ। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, জায়নবাদী দখলদার সেনাবাহিনীর প্রতি আমার এই বার্তা। এই ভূখণ্ড আমাদের ভূমি। আমরা এটার অধিকার ছেড়ে দেব না। যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের স্বীকৃতি প্রত্যাহার করতে হবে।

মৃত্যুর আগে হুইল চেয়ারে চলাচল করা আবু থুরাইয়াহ গাজা উপত্যকার ইসরায়েল সীমান্তে প্রতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। ৬ ডিসেম্বর থেকে তিনিসহ অন্যান্য প্রতিবাদকারীরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের ছবিতে দেখা যায়, আবু থুরাইয়াহ বিদ্যুতের খুঁটি বেয়ে উঠছেন এবং হাতে ফিলিস্তিনের একটি পতাকা ধরে আছেন। ১৫ ডিসেম্বর আবু থুরাইয়াহ ইসরায়েলের একজন স্নাইপারের গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন।

ট্রাম্পের জেরুজালেম নিয়ে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভে দুই পা হারানো আবু থুরাইয়াহ

একই দিনে ইয়াসির সুক্কার নামে আরেক ফিলিস্তিনি প্রতিবাদকারী গাজা সীমান্তে বিক্ষোভের সময় নিহত হন। দখলকৃত  পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন আরও দুই ফিলিস্তিনি। এর ফলে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ জনে।

শনিবার আবু থুরাইয়াহসহ  নিহত আরও তিন ফিলিস্তিনির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠা নিহত বিক্ষোভকারীদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন গাজা শহরে।

আল জাজিরার সাংবাদিক অ্যালান ফিশার জানান, তিনি (আবু থুরাইয়াহ) বাড়িতে হুইল চেয়ার থেকে নামতেন এবং গাজা শহরে ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে মিছিলগুলোতে যোগ দিতেন। যখন ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে নিহত হন তখনও তার হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা ছিল।

গাজা’র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা জানান, ইসরায়েলি স্নাইপাররা বিস্ফোরক ভর্তি গুলি ব্যবহার করছে এবং টিয়ার গ্যাসের ক্যান ছুড়ছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী অজ্ঞাত ধরনের গ্যাস বোমা ব্যবহার করছে। এর ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, বমি-কাশি ও হৃৎকম্পন বেড়ে যাচ্ছে অনেকের।

মুখপাত্র জানান, ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করছে। এমনকি প্যারামেডিকস, অ্যাম্বুলেন্স ও সংবাদকর্মীদেরও টার্গেট করছে তারা।

আবু থুরাইয়াহ`র লাশ কাঁধে নিয়ে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ

২০০৮ সালের এপ্রিলে আবু থুরাইয়াহ কয়েকজন বন্ধুদের সঙ্গে গাজার আল-বুরেইজ শরণার্থী ক্যাম্পে বসে ছিলেন। এ সময় ইসরায়েলের বিমান হামলায় তিনি দুই পা ও একটি কিডনি হারান। ওই হামলায় আরও সাত ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন।

১১ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অসুস্থ বাবা-মা, ছয় বোন ও তিন ভাই রয়েছেন তারা। ইসরায়েলি বিমান হামলার আগে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করলেও পঙ্গু হওয়ার পর ক্যাম্পে নতুন কাজ খুঁজে নিতে বাধ্য হন। শেষ পর্যন্ত কার পরিষ্কার করার একটি কাজ পেয়ে যান। দিনে ৫০-৭০ শেকল (১৪-২০ ডলার) আয় করতেন। মাঝে মাঝেই তিনি সবজি বিক্রি করতেন।

কয়েক বছর আগে শেহাব বার্তা সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবু থুরাইয়াহ নিজের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমি আশাকরি একদিন আমার নিজের একটি বাড়ি হবে। আমি আশাকরি, ইউরোপ ও আরব দেশগুলো আমার কথা জানলে আমাকে বিদেশে চিকিৎসা ও কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করবে। সূত্র: আল জাজিরা।