দুর্নীতির অভিযোগের কারণে রাজনীতিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশটির পুলিশ দাবি করেছে, তদন্তে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর সম্প্রতি জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষ পেয়েছে তারই এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী শোলোম ফিলবারকে। এ অবস্থায় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নেতানিয়াহু আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারেন। নির্বাচনি প্রচারণার ডামাডোলে থেমে যাবে তার বিরুদ্ধে চলা তদন্ত। ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এখবর জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যে তদন্তগুলো চলছে তাতে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ইসরায়েলের রক্ষণশীল এই নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। তার ওপর নিজের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হওয়া তার বিপদ আরও বেড়েছে। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলতে থাকা একাধিক তদন্তের মধ্যে একটিতে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে সাক্ষ্য দেবেন ফিলবার।
ফিলবারের রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহুর জন্য পরিস্থিতি বেশ জটিল করে ফেলেছে। এর আগ পর্যন্ত ধরে নেওয়া হতো, তার ঘনিষ্ঠ বলয়ের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ খুব দৃঢ়। কিন্তু ফিলবারের এই মন পরিবর্তনের ঘটনায় রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু। একজন সমালোচক তো ইতোমধ্যেই নেতানিয়াহুকে ‘রাজনৈতিক লাশ’ আখ্যা দিয়ে ফেলেছেন।
এমন অবস্থা সামাল দিতে নেতানিয়াহু কী করবেন তা নিয়েও আছে জল্পনা। পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন, নেতানিয়াহু আগাম নির্বাচনের ডাক দিতে পারেন। এতে করে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হয়ে যাওয়ার ফলে তদন্ত কার্যক্রম থেমে যেতে বাধ্য হবে। আর সেই সুযোগে নেতানিয়াহু তার ডানপন্থী সমর্থকদের সংগঠিত করে পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করবেন।
অসমর্থিত সূত্রের বরাতে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম ফিলবারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রকৃতি সম্পর্কে জানিয়েছে। অভিযোগটি হলো, টেলিকম খাত নিয়ন্ত্রণকারী পক্ষের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা পাওয়ার বিনিময়ে বাজেকের মালিকেরা তাদের মালিকানাধীন সম্প্রচার মাধ্যমে ভালো খবর প্রচার করার প্রস্তাব দিয়েছিল। বাজেকের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
ফিলবারকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান বাজেক টেলিকমের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফিলবারকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল কিছু দিন আগে।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুটি দুর্নীতির তদন্তের মধ্যে একটিতে তাকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ, তিনি প্রায় আড়াই কোটি টাকার ঘুষ নিয়েছেন একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। ইসরায়েলের সবচেয়ে জনপ্রিয় দৈনিককে সুবিধা পাইয়ে দিতে প্রতিযোগী আরেকটি পত্রিকার সার্কুলেশন বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে তিনি শরিক ছিলেন। অপর তদন্তের অভিযোগ হলো, বিচারককে ঘুষ দেওয়া। নেতানিয়াহুর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যক্তিগত খাতে খরচ করার। এ বিষয়ে মামলা ঠেকাতে নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এক বিচারককে ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন। নেতানিয়াহুর পরিবারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগটিকে কাল্পনিক আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
নেতানিয়াহু ইসরায়েলের রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরে জড়িত। ২০০৯ থেকে তিনি ক্ষমতায় আছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ধরলে প্রায় ১২ বছর ইসরায়েল রাষ্ট্রের নেতৃত্ব তার হাতে ছিল। ‘ডাইনি খোঁজার’ সঙ্গে তুলনা করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর অসারতা তুলে ধরার চেষ্টা করেন তিনি। এতো অভিযোগ থাকার পরও তিনি ২০১৯ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা জানিয়েছেন। তার দলের অন্য নেতারা অবশ্য এখনও প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর পক্ষেই আছেন।