গাজায় পণ্য আমদানি-রফতানি নিষিদ্ধ করল ইসরায়েল

ইসরায়েল অবরুদ্ধ গাজায় আমদানি-রফতানি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। গাজা থেকে পণ্য পাঠানো ও প্রয়োজনীয় পণ্য আনার জন্য ব্যবহৃত কেরেম শালোম সীমান্তে জারি করেছে নিষেধাজ্ঞা। তার জানিয়েছে, মানবিক বিবেচনায় প্রয়োজনীয় এমন পণ্য ছাড়া আর কোনও কিছু গাজাতে ঢুকতে  দেওয়া হবে না। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, নিজেদের এমন সিদ্ধান্তের পক্ষে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ঘুড়ি দিয়ে করা হামলার বিষয়টিকে সামনে এনেছে। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ঘুড়ি ও বেলুন দিয়ে সীমান্ত পার করে ফসলের ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইসরায়েলের। গাজার ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েছেন ইসরায়েলের সিদ্ধান্তে। অর্থ পরিশোধ করলেও তাদের পণ্য আর গাজায় ঢুকতে পারছে না। এই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে জাতিসংঘের জন্য নির্ধারিত নির্মাণ সামগ্রীও। গাজার ব্যবসায়ীরা ইসরায়েলি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গাজার আমদানি-রফতানি নিষিদ্ধ করে দেওয়ার ইসরায়েলি সিদ্ধান্তে হুমকির মুখে রয়েছে অবরুদ্ধ এলাকাটির অর্থনীতি। একজন ব্যবসায়ী মন্তব্য করেছেন, ইসরায়েলের কেরেম শালোম সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ‘মৃত্যু পরোয়ানার সমান।’37022999_1786315628081692_7196486444846678016_n

গত সোমবার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ‘ফিলিস্তিন ক্রসিং অথরিটিকে’ জানিয়েছে, খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি, পশু খাদ্য, ও গবাদিপশু ছাড়া আর কোনও কিছু তার কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে গাজায় ঢুকতে দেবে না। নির্মাণ উপকরণ, আসবাব, কাঠ, ইলেক্ট্রনিক যান্ত্রপাতি, কাপড়, পোশাক, কম্বল, জেনারেটর ইত্যাদি পণ্য প্রবেশ করতে পারবে না গাজায়। গাজাতে যেমন আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসরায়েল, তেমনি গাজা থেকে কোনও কিছু রফতানির পথও রুদ্ধ করে দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষের জীবিকা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে ইসরায়েলি সিদ্ধান্তে। এতে গাজার সম্পূর্ণ অর্থনীতির বিপর্যস্ত হওয়া পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গাজার কামাল আব্দুল হাদি কার্পেট ও আসবাবপত্রের দোকানের স্বত্বাধিকারী। তিনি কেরেম শালোম সীমান্ত ব্যবহার করেই পশ্চিম তীর ও ইসরায়েলে পণ্য পাঠাতেন এতদিন ধরে। আল জাজিরাকে হাদি বলেছেন, ‘এটা যদি চলতে থাকে তাহলে তা আমাদের ব্যবসার জন্য দুর্যোগ ডেকে আনবে। আশা করি ইসরায়েল এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখবে না। যদি রাখে, তাহলে এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য মৃত্যু পরোয়ানা হয়ে দেখা দেবে। আমাদের এখানকার অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ। এখানকার কারও কারও পক্ষে আমাদের পণ্য কেনা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমরা আমদের পণ্য বিক্রি করি রপ্তানির মাধ্যমেই।’

জাতিসংঘের সংস্থা ‘ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ এবং ‘লিগাল সেন্টার ফর ফ্রিডম অফ মুভমেন্ট’ (গিশা) জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে সাধারণত যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয় তার ৪৫ শতাংশই আটকে দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞায় যেসব আমদানি পণ্য আটকে গেছে তার মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের সংস্থার জন্য নির্ধারিত নির্মাণ উপকরণ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত স্থাপনা নির্মাণে ওই নির্মাণ উপকরণগুলো আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আল জাজিরা জানিয়েছে, গাজায় প্রবেশের জন্য যে পয়েন্টগুলো ব্যবহৃত হতো তার সবগুলো এক এক করে বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। নাহাল ওজ বন্ধ হয়েছে ২০১০ সালে, কারনি বন্ধ হয়েছে ২০১১ সালে, কিসসুফিম বন্ধ হয়েছে ২০০৫ সালে,  সুফা বন্ধ হয়েছে ২০০৮ সালে। এরেজ পয়েন্ট দিয়ে শুধু  ইসরায়েলি অনুমতিপত্রধারী ব্যক্তিরা যাওয়া-আসা করতে পারেন। আর ২০০৭ সাল থেকে রাফা দিয়ে শুধু পায়ে হেঁটে যাওয়া-আসা করার অনুমতি দেওয়া হয়।