জর্ডানি বাহিনীর অভিযানে নিহত আট জঙ্গি, ভবন বিধ্বস্ত

জর্ডানের সরকারি বাহিনী রবিবার জানিয়েছে, জঙ্গি দমনে চালানো এক অভিযানে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর চার জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। অভিযানে নিহত হয়েছে অন্তত আট জঙ্গি। ওই অভিযানে জঙ্গিদের ঘটানো বিস্ফোরণে একটি ভবন আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের সময় আহত হয়েছেন নারী ও শিশুসহ ২০ জন সাধারণ নাগরিক। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কোনও সংগঠন নিহত জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে বিবৃতি দেয়নি। তবে জর্ডানি নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রগুলো এই ঘটনায় ইসলামিক স্টেটকে দায়ী করেছেন।জর্ডানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ভবন বিধ্বস্ত

গত নভেম্বরে নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনা, শপিং মল এবং উদারপন্থী ধর্মীয় নেতাদের ওপর হামলা চালানোর একটি বড় পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয় জর্ডান। এসব পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজন ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড দেয় জর্ডানের আদালত। তখন থেকেই ইসলামিক স্টেটের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলার আশঙ্কায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় ছিল। তাছাড়া জর্ডানের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তি চুক্তি রয়েছে এবং বর্তমান রাজা তা কার্যকর রাখাতে আগ্রহী। রাজা আব্দুল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি সংগঠনগুলোর উত্থানের বিষয়ে বহু আগে থেকেই সরব।

ঘটনার শুরু গত শুক্রবার। ওইদিন রাজধানী আম্মানের কাছে অবস্থিত খ্রিস্টান অধ্যুষিত ফুহাইস শহরে একটি সংগীত উৎসব চলছিল। সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করা পুলিশের একটি টহল গাড়ি বোমা হামলার শিকার হয়। এতে একজন পুলিশ সদস্য প্রাণ হারান। আহত হন ছয় জন। দেশটির রাজা আব্দুল্লাহ অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সন্দেহভাজনরা ফুহাইস থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সল্ট শহরের একটি বহুতল ভবনে আত্মগোপন করে। হামলাকারীদের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজা আব্দুল্লাহ এক সভায় বলেছিলেন, ‘আমরা খারেজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব এবং সর্বোচ্চ শক্তি ও নিষ্ঠা নিয়ে তাদের ওপর চরম আঘাত হানব।’

শনিবার সেখানে অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী ওমর রাজ্জাজ একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেন নিরাপত্তা বাহিনীর শত শত সদস্যের অংশগ্রহণে হওয়া অভিযানটির সমন্বয় সাধনের জন্য। অভিযান শুরুর পর জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি বিনিময় হয়। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্য প্রাণ হারান। জর্ডানের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গোলাগুলিতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। তাদেরকে শনিবার রাতেই রাজধানীর আম্মানের মূল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিধ্বস্ত ভবন থেকে জঙ্গিদের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে জর্ডানি বাহিনী। প্রথমে তিন জনের লাশ পাওয়া গেলেও পরে আরও পাঁচ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর কারণে ভবনের একটি পাশ বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে নিহত জঙ্গিদের পরিচয় প্রকাশ করা না হলেও নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রগুলো জানিয়েছে, তাদের ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে সম্পর্কিত ‘স্লিপার সেল’ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।