সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি কার্যকরে একমত হতে পারল না তুরস্ক, রাশিয়া ও ইরান

রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরান সিরিয়ার ইদলিবে অস্ত্রবিরতি কার্যকর করার বিষয়ে একমত হতে পারেনি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান অস্ত্রবিরতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার তেহরানে পুতিন, রুহানি ও এরদোয়ান মিলিত হয়েছিলেন বৈঠকে। কিন্তু ইসলামি স্টেটের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি অস্ত্রবিরতি মেনে চলবে না, এমন আশঙ্কায় শেষ পর্যন্ত অস্ত্রবিরতি ঘোষণার বিরুদ্ধে যায় রাশিয়া। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়ে গেলে সিরিয়ার ইদলিবে অবস্থান নেওয়া বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আসাদ বাহিনীর সম্ভাব্য হামলা স্থগিত করা সম্ভব হতো। জাতিসংঘ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ইদলিবে যে হামলা হতে যাচ্ছে তাতে এর বাসিন্দাদের নেমে আসবে মহা বিপর্যয়।s1.reutersmedia.net

তিন নেতার বৈঠকটি মূল উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি সমঝোতায় উপনীত হওয়া, যাতে যৌথভাবে অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেওয়া যায়। সিরিয়া সংকটের কোনও সামরিক সমাধান নেই। বরং একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই দেশটিতে গৃহযুদ্ধের ইতি টানতে হবে, এমন একটি প্রস্তাবনার ভিত্তিতে সম্মেলনটি আয়োজনের কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে ইদলিবে রাশিয়া ও আসাদ বাহিনী বিমান হামলা শুরু করে যা পূর্ণ হামলার আগে করা হয়ে থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে এরদোয়ানের অস্ত্রবিরতি বাস্তবায়নের আহ্বান কার্যকর করার পথ থাকল না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ইদলিবে হামলা হলে তা পরিস্থিতিকে ‘নির্বিচার হত্যার’ দিকে ঠেলে দেবে। তুরস্কের পক্ষে আর শরণার্থীদের জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়।

কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে লাভ নেই। কারণ এই সমঝোতায় তো জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে নেওয়া সম্ভব নয়। অপরদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, সিরিয়াকে তার নিজের দেশের সীমানার মধ্যে থাকা সব এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে দিতে হবে। রয়টার্স লিখেছে, ইদলিবই আসাদবিরোধীদের শেষ শক্তিশালী অবস্থান। সেখানেই আসাদ বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের শেষবারের মতো সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হতে পারে।   

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে প্রায় সাত বছর ধরে। বিভিন্ন শক্তি সেখানে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন করেছে। দেশটিতে যেমন সক্রিয় ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী, তেমনি রয়েছে সৌদি আরব, কাতার, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে কাজ করা সশস্ত্র গোষ্ঠী। সিরিয়ার আসাদ বাহিনীকে সহায়তা করছে রাশিয়া। তাদের পক্ষে রয়েছে ইরান সমর্থিত বাহিনী। এর মধ্যে ইসরায়েলও দক্ষিণ সিরিয়াতে সশস্ত্র কয়েকটি গোষ্ঠীকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে।

শুক্রবার তেহরানে অনুষ্ঠিত তিন নেতার সম্মেলনে এরদোয়ান তার সূচনা বক্তব্যে বলেছিলেন, অস্ত্র বিরতির বিষয়ে সম্মত হতে পারলে তা এই সম্মেলনের জন্য বিজয় হিসেবে গণ্য হবে।

এর জবাবে পুতিন বলেছেন, ‘সমস্যা হচ্ছে, এই আলোচনার টেবিলে বিদ্রোহীদের কোনও প্রতিনিধি নেই। তারচেয়েও বড় কথা, এখানে জাভাত আল নুসরা বা আইএস বা সিরিয়ার সেনাবাহিনীর কোনও প্রতিনিধি নেই। আমি তুরস্কের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে সমর্থন করি। এটা হলে ভালোই হতো। কিন্তু আমি তো ওই সব গোষ্ঠীর মুখপাত্র নই। তাছাড়া জাভাত আল নুসরা বা আইএসের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো গুলি চালানো বা ড্রোন দিয়ে বোমা হামলা করা বন্ধ করে অস্ত্রবিরতি মেনে নেবে, এমন নিশ্চয়তাও তো দিতে পারি না।’

তিন নেতা আল কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আল নুসরা ফ্রন্ট ও সমমনা সংগঠন এবং ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের মূলোৎপাটনের বিষয়ে একমত হয়েছেন।