সাংবাদিক খাশোগি হত্যা

সৌদি আরবের সমালোচনার সাধ্য পাকিস্তানের নেই: ইমরান খান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সোমবার (২২ অক্টোবর) বলেছেন, সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনায় সৌদি আরবের সমালোচনা করার সাধ্য এখন পাকিস্তানের নেই। অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য সৌদি আরবের ঋণ তার দেশের অত্যন্ত প্রয়োজন। সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যায় আর সবার মতো তিনি নিজেও হতভম্ব। কিন্তু তার পক্ষে রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য সৌদি আরবের বিনিয়োগ সম্মেলন ‘ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ বয়কট করা সম্ভব নয়। সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য আগামী মঙ্গলবার ইমরান খানের রিয়াদে যাওয়ার কথা। নিজের দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং তা থেকে উত্তরণে সৌদি আরবের ঋণের প্রয়োজনীয়তার কথা জানাতে মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা মিডলইস্ট আইকে ইমরান খান বলেছেন, আগামী দুই-তিন মাসের প্রয়োজন মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রাও পাকিস্তানের হাতে নেই।

000_1998FQ

সৌদি আরবের ওই বিনিয়োগ সম্মেলন ‘দাভোস ইন ডেজার্ট’ নামে খ্যাত। ২০১৮ সালে ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সুইজারল্যান্ডের দাভোসে। সেই সম্মেলনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা উপস্থিত হন। বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি ও প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণের বিষয়ে সেখানে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। রিয়াদের ‘ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট সামিটকেও’ তেমন বড় অর্থনৈতিক সম্মেলন হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু জামাল খাশোগির হত্যার ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিনিয়োগকারী ও বিনিয়োগ প্রত্যাশীরা সম্মেলন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি সম্মেলনের মিডিয়া পার্টনাররাও সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বয়কটের এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদরাও।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচক হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক জামাল খাশোগি গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তানবুলে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন। সৌদি আরব থেকে তুরস্কে পাঠানো একদল এজেন্ট দূতাবাসের ভিতরেই খাশোগিকে হত্যা করে। সৌদি আরব প্রথমে জামাল খাশোগির কনস্যুলেট ভবন থেকে বের হয়ে যাওয়ার দাবি করলেও এখন বলছে, দূতাবাসের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে। এমন অবস্থায় নিহতের স্বজনরা মরদেহ ফেরত চাইলে তা উপস্থাপনেও অসমর্থ হয়েছে সৌদি আরব। তুরস্কের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, জামাল খাশোগিকে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হয়েছে।

মিডলইস্ট মনিটর লিখছে, খাশোগির মৃত্যুর বিষয়ে সৌদি আরবের বক্তব্য তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন ইমরান খান। তার ভাষ্য, ‘তুরস্কে যা হয়েছে তা বিস্ময়কর। আমি আর কী বলব? এতে আমরা সবাই হতভম্ব হয়ে পড়েছি। সৌদি আরবের সরকারকে এর সদুত্তর দিতে হবে। সৌদি আরব কি বলে তা শুনতে আমরা অপেক্ষায় থাকবো। আমরা আশা করি, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন কোনও ব্যাখ্যা সৌদি আরব দিতে পারবে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে পদক্ষেপে নেবে।’ খাশোগির হত্যার ঘটনায় পাকিস্তান ‘হতভম্ব’ হয়ে গেলেও দেশকে অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপে অসমর্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন ইমরান খান। তার ভাষ্য, ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট সামিটে যাওয়া ছাড়া তার আর কোনও উপায় নেই। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুরবস্থা এমন যে সৌদি আরবের ঋণ সহায়তা পাওয়া তার জন্য অপরিহার্য: ‘আগামী দুই তিন মাসের আমদানি পণ্যের মূল্য পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রাও আমাদের কাছে নেই।’