টুইটারেই রক্ষা সৌদি আরবের তরুণী রাহাফের

নিজেকে রক্ষায় সহায়তা পেতে সৌদি আরবের নাগরিক রাহাফ মুহাম্মেদ আল কুনুন শুরু করেছিলেন টুইটারে বার্তা প্রকাশ। খুব কম সময়ের মধ্যেই সেসব বার্তার সূত্রে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার অসহায়ত্বের কথা পৌঁছে যায়। অপরাপর টুইটার ব্যবহারকারীর ‘সেভরাহাফ’ হ্যাশট্যাগ দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিশ্ববাসীর। এগিয়ে যায় মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা পর্যন্ত। তার সহায়তার আবেদনে সমর্থন জানান ব্যাংককে থাকা জার্মানির রাষ্ট্রদূত। তাদের প্রচেষ্টায় রক্ষা পান রাহাফ। সংবাদমাধ্যম বিবিসি উল্লেখ করেছে, রাহাফের টুইটার অ্যাকাউন্টে ফলোয়ার ছিল মাত্র ২৪ জন। কিন্তু জীবনের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টুইটারে তার অনুসারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭ হাজারে।_105125543_hi051534849-1

কুয়েত থেকে পালানো ও অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয়প্রার্থী সৌদি তরুণী রাহাফ মোহাম্মেদ আল কুনুনকে ট্রানজিটের সময় আটকে দেয় থাইল্যান্ডের অভিবাসন কর্মকর্তারা। তারা রাহাফকে জোর করে কুয়েতেগামী বিমানে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। রাহাফ তার পরিবারের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন। চুল কাটার জন্য তাকে ছয় মাস ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। তাছাড়া, ইসলাম ত্যাগের কারণে তার এক জ্ঞাতি ভাই তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে।

০৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তত্ত্বাবধানে তাকে থাইল্যান্ডে রাখার ব্যাপারে সম্মত হয় সে দেশের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে রাহাফ প্রত্যর্পণ ও পরিবারের সদস্যদের হাতে অনার কিলিংয়ের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে মুক্ত হন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা তাকে বৈধ শরণার্থীর স্বীকৃতি দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, তারা বিষয়টি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী মূল্যায়ন করবে।

থাইল্যান্ডের অভিবাসন কর্মকর্তারা যখন রাহাফকে জোর করে কুয়েতে পাঠানোর চেষ্টা করছিল, তখন রাহাফ নিজেকে আটকে রেখেছিলেন হোটেলের কক্ষে। সেখান থেকে নিজের অবস্থা জানিয়ে তিনি শুরু করেন টুইটারে বার্তা প্রকাশ। তার ফ্লয়ারের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৪। রাহাফের প্রথম টুইট, ‘আমি সেই মেয়ে যে থাইল্যান্ডে পালিয়ে এসেছে। আমি সত্যি খুব বিপদে আছি। কারণ সৌদি আরবের দূতাবাস আমাকে জোর করে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।’

তারপর তিনি লেখেন, ‘আমি আতঙ্কিত। আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ রাহাফের এমন কথা উপেক্ষা করতে পারেননি তার ফলোয়াররা। এই লেখার পরপরই টুইটারে দেখা দেয় প্রথম ‘সেভরাহাফ’ হ্যাশট্যাগ। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মিসরীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক মোনাএলথাউয়ি রাহাফের আরবিতে লেখা টুইটার বার্তা ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। তার অনুসারীর সংখ্যা অনেক হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পরে আকুতি জানিয়ে রাহাফের লেখা বার্তা।

এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে রাহাফ সংক্রান্ত টুইটার বার্তা নজরে আসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের সহপরিচালক ফিল রবার্টসনের। তিনি টুইট করেন, আঠারো বছর বয়সী সৌদি নারী রাহাফ মোহাম্মেদ আল কুনুনকে ব্যাংকক বিমানবন্দরে আটকে রাখা হয়েছে। সৌদি আরব তার পাসপোর্ট বাতিল করে দেওয়ায় তিনি অস্ট্রেলিয়া যেতে পারছেন না। রাহাফ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে চান। কারণ তিনি মনে করেন, রিয়াদে ফেরত পাঠালে তাকে হত্যা করা হবে। তার ইউএনএইচসিআরের সহায়তা প্রয়োজন।’

গত রবিবার (০৬ জানুয়ারি) দিনের শুরু থেকেই তিনি রাহাফের সঙ্গে সরাসরি টুইটারে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন, যাতে রাহাফ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথভাবে নিজের অবস্থান তলে ধরতে পারেন। অন্যদিকে রবিবারজুড়ে রাহাফের টুইট ছড়িয়ে পড়তে থাকে আরও অনেক বেশি মানুষের কাছে। টুইটার বার্তায় তিনি নিজের যে অসহায়ত্ব তুলে ধরেছিলেন তা টুইটার ব্যবহারকারীদের সহানুভূতি ও সমর্থন পেয়েছে। যার ফলে রবিবার দিনের মধ্যভাগ নাগাদ ‘সেভরাহাফ’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহৃত হয় প্রায় পাঁচ লাখ টুইটার ব্যবহারকারী বার্তায়।

সৌদি আরবের প্রায় অচেনা এক তরুণী টুইটারে ২৪ ঘন্টায় প্রায় ২৭ হাজার ফলোয়ার পেয়ে যান। টুইটারে যুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবহারকারীরা দাঁড়ান তার পাশে। তাদের সূত্রে খবর ছড়িয়ে পড়ে। উদ্যোগী হয়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংস্থা। রক্ষা পান রাহাফ।