ইসরায়েল কেবল ইহুদিদেরই দেশ: নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইহুদি হলেও মোট জনসংখ্যার প্রায় ২১ শতাংশ আরবের মুসলিম, খ্রিস্টান ও দ্রুজ সম্প্রদায়ভূক্ত। তবে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তার দেশে সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য সমানাধিকার থাকলেও রাষ্ট্রটি সবার নয়। ১০ মার্চ (রবিবার) জাতিরাষ্ট্র সংক্রান্ত আইনকে সামনে এনে তিনি দাবি করেন, ইসরায়েল কেবল ইহুদিদের রাষ্ট্র। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে কট্টরপন্থী ইহুদিদের মন জয় করতেই এমন উত্তেজক ডানপন্থী মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু।2019-03-10T114210Z_659018894_RC1184A5D810_RTRMADP_3_ISRAEL-POLITICS
‘জায়নবাদ’ নামের মতবাদের মধ্য দিয়েই ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসরায়েল রাষ্ট্র। জায়নবাদ ইহুদি ধর্মের দর্শন নয়, এটি একটি রাজনৈতিক মতবাদ; অলীক রূপকথায় যে মতবাদের শরীর গড়ে উঠেছে। জায়নবাদের ভাষ্য, জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত পবিত্র নগরীতে স্রষ্টা তাদের অধিকার ফিরিয়ে নিতে বলেছিল! ইতিহাসে নজর ফেরালে দেখা যায়, ১৮ শতক থেকে জায়নবাদ নামের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইউরোপসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ইহুদিরা তাদের বর্ণবাদী ধারণা ধারণা বিস্তার ঘটিয়ে দখল হওয়া ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম দেন। গত বছরের জুলাই মাসে জায়নবাদী মতাদর্শকে আইনগত ভিত্তি দিতে নেসেটে পাস হওয়া ‘জাতিরাষ্ট্র বিষয়ক আইন’ অনুযায়ী দখলীকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ঐতিহাসিকভাবেই ইহুদিদের জন্মভূমি আখ্যা দেওয়া হয়। বলা হয়, সঙ্গত কারণেই এখানকার মাটিকে নিজেদের দাবি করার অধিকার রয়েছে তাদের। আইনে বলা হয় ইসরায়েল শুধু ইহুদি নাগরিকদের রাষ্ট্র।
ইসরায়েলের নাগরিক অধিকার প্রশ্নে ইনস্টাগ্রামে সে দেশের অভিনেত্রী রোটেম সেলার সমালোচনার জবাবে ওই আইনের প্রসঙ্গ সামনে এনেছেন নেতানিয়াহু। তিনি লিখেছেন, ইসরায়েলে বসবাসরত আরব জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ইহুদিদের সমান ‘অধিকার’ রয়েছে। তবে ‘ইসরায়েল সবার দেশ নেয়।’ এ প্রসঙ্গে তিনি ইহুদি ধর্মের ভিত্তিতে ইসরায়েলের নাগরিকত্ব নির্ধারণের জন্য পাস করা আইনের দোহাই দেন, যা তার সরকারের আমলেই পাস হয়েছে। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা যে বেসিক ন্যাশনালিটি আইন পাস করেছি সেই অনুযায়ী ইসরায়েল ইহুদিদের জাতিরাষ্ট্র।’ তবে এরপর তিনি আরব জনগোষ্ঠীর জন্য তার সরকারের অবদান রাখার দাবি উত্থাপন করেন: ইসরায়েলে বসবাসরত আরব নাগরিকদের নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তারা আমাদের আর সবার মতোই অধিকার রাখে। লিকুদ পার্টি অন্য যে কোনও সরকারের চেয়ে অনেক বেশি অবদান রাখার চেষ্টা করেছে আরব জনগোষ্ঠীর সদস্যদের কল্যাণে। নেতানিয়াহুর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ইসরায়েলে সমালোচনা শুরু হলে তিনি মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে আবারও বলেছেন, ইসরায়েল ‘একটি গণতান্ত্রিক ইহুদি রাষ্ট্র’ যেখানে সমানাধিকার আছে। তবে ‘এই জাতিরাষ্ট্র সব বাসিন্দাদের নয়; শুধুমাত্র ইহুদিদের।’
ইসরায়েলের প্রায় ৯০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ২১ শতাংশই আরব জনগোষ্ঠীর মানুষ, যারা মুসলিম, খ্রিস্টান ও দ্রুজ সম্প্রদায়ভূক্ত। ইসরায়েলে বর্তমান লিকুদ পার্টির নেতৃত্বে ক্ষমতায় থাকা জোটটিকে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ডানপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে এখন একদিকে যেমন দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে, অন্যদিকে আগামী ৯ এপ্রিল ইসরায়েলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন। বিরোধীদের প্রথম দিকে দুর্বল বামপন্থী আখ্যা দিয়ে হেয় করার চেষ্টা করেছিলেন নেতানিয়াহু। কিন্তু পরে দেখা যায়, মধ্যপন্থী বিরোধীদের জোটে যুক্ত হয়েছেন ইসরায়েলের সাবেক তিন সেনাপ্রধান। আরব বংশোদ্ভূতরা জড়িত যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা দুই জোটের কোনওটিতেই যোগ দেবে না বলে মনে করে গার্ডিয়ান। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ডানপন্থী ভোটারদের সমর্থন পেতেই আরব বংশোদ্ভূতদের ইসরায়েলের নাগরিকত্ব দেওয়া না দেওয়া নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু।
গত বছরের ১৯ জুলাই ইসরায়েলের পার্লামেন্টে ‘জাতিরাষ্ট্র’ আইনটি পাস হয় ৬২ ভোটে। প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে ভোট ছিল ৫৫টি। নতুন পাস হওয়া আইনে আরবির সরকারি মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। হিব্রুই এখন ইসরায়েলের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। আইনে বলা হয়, ‘ল্যান্ড অব ইসরায়েল ইহুদিদের আবাসভূমি।’