সৌদি আরবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল পরিশোধনাগারে ড্রোন হামলার নানামুখী প্রভাব দেখা দিতে শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সৌদি আরবের তেলের উৎপাদন অর্ধেক কমে গেছে। আগামী কয়েকদিনে তা আরও বাড়তে পারে। কবে এই তেলের স্থাপনা শুরু হবে তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
শনিবার সকালে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর মালিকানাধীন বড় দুটি তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র আবকাইক-এ ড্রোন হামলার পর আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।হামলায় উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। হুথি বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয় ইরান। হুথিদের অত্যাধুনিক ড্রোন নির্মাণেও সহায়তা দিয়েছে তেহরান। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দাবি করেছেন, ইয়েমেন থেকে এই ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে বলে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছেন।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হামলার পর এশিয়ার বাজারে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ব্যারেল প্রতি ১০.৬৮ শতাংশ দাম বাড়িয়ে ৬০.৭১ ডলার এবং ব্রেন্ট ব্যারেল প্রতি ১১.৭৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৬৭.৩১ ডলার করেছে।
ড্রোন হামলার শিকার হওয়ার পর সৌদি আরব তাদের তেল উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিন ৫০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমে যাবে, যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৫ শতাংশ। আর সৌদি আরবের অর্ধেক।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান আরামকো পরিচালিত ওই পরিশোধনাগার আবার কবে পুরোপুরি চালু হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চারবছর আগে শুরু ইয়েমেন যুদ্ধের পর এখন পর্যন্ত আর কোনও হামলায় তেল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়নি। এই হামলায় একদিনেই ৫৭ লাখ ব্যারেল ক্ষতি করেছে এবং সৌদি আরবের তেল বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
সাম্প্রতিক হামলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নড়েচড়ে বসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে, প্রয়োজনে তারা তাদের কৌশলগত জ্বালানি মজুদ উন্মুক্ত করবে।
এখন পর্যন্ত বাজারে পর্যাপ্ত তেল রয়েছে। ওপেক এবং তাদের মিত্র রাশিয়া চলতি বছর উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল। তবে বাজারে দাম কমবেশি করার সক্ষমতা সৌদি আরবেরই ছিল। এখন সেটা কমে গেছে।
ইউরেশিয়া গ্রুপের আয়হাম কামাল বলেন, আবারও উৎপাদন বাড়িয়ে বাজার দখল সম্ভব সৌদি আরবের । তবে এই মুহূর্তে তাদের স্থাপনাগুলো আরও শক্তিশালী করা দরকার।
আইএইচএসে মারকিটের তেল পরামর্শক রজার ডিওয়ান বলেন, আবাইক হলো তেল সরবরাহ ব্যবস্থার হৃদপিণ্ড। মাত্রই এটা একটি হার্ট অ্যাটাকে পড়েছে। এর তীব্রতা আমরা জানি না।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক র্যাপিডান এনার্জি গ্রুপের রবার্ট ম্যাকনেলি বলেন, বিশ্বের তেল সরবরাহের জন্য আবাইক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই ঘটনায় তেলের দাম বাড়ছে। যদি এই ব্যাঘাত দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায় তাহলে তেলের আরও বেড়ে যাবে। এমনিতেই উল্লেখমাত্রায় বেড়েছে দাম।