বাংলাদেশিকে হত্যায় সৌদি আরবে প্রথম মৃত্যুদণ্ড

সৌদি আরবে কোনও বাংলাদেশিকে হত্যায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) আদালতের রায়ে বাংলাদেশি গৃহকর্মী আবিরন বেগম হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে সৌদি গৃহকর্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড এবং গৃহকর্তাকে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও সৌদি আরবের রিয়াদের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র বাংলা সংস্করণ এ খবর জানিয়েছে।

খুলনার পাইকগাছার বাসিন্দা আবিরন বেগম স্থানীয় এক দালালের সহযোগিতায় ঢাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ২০১৭ সালে সৌদি আরবে যান গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে।

এরপর ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রিয়াদের আজিজিয়ায় নিহত হন তিনি। তার মরদেহের ফরেনসিক প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে আসে।

আবিরনের মরদেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিলে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সহায়তার হত্যাকাণ্ডের ৭ মাস পর ওই বছরের ১৪ অক্টোবর তার মরদেহ দেশে ফেরানো হয়।

মরদেহের সঙ্গে আসা আবিরনের মৃত্যু সনদে মৃত্যুর কারণ ‘হত্যা’ লেখা ছিল। পরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিহতের পরিবার, নিয়োগকারী সংস্থা, মন্ত্রণালয়, দূতাবাস সব জায়গায় খোঁজ-খবর নিয়ে ডিসেম্বরে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, সৌদি আরবে যাওয়ার পর থেকেই মধ্যবয়সী আবিরনকে পিটিয়ে, গরম পানিতে ঝলসে এবং আরও নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুপারিশ করা হয়।

এরপর নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় আবিরন হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ।

 

খবরে বলা হয়েছে, মামলার প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানীর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত এবং সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটনের দায়ে আদালত কেসাস বা জানের বদলে জানের রায় প্রদান করে।

ওই মামলায় গৃহকর্তা বাসেম সালেমের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের আলামত ধ্বংস, আবিরন বেগমকে নিজ বাসার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় কাজে পাঠানো ও চিকিৎসার ব্যবস্থা না করার অভিযোগে মোট ৩ বছর ২ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মামলার তৃতীয় আসামি সৌদি দম্পতির ছেলের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট থাকার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে আবিরন বেগমকে বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করায় তাকে সাত মাস কিশোর সংশোধনাগারে থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সৌদি আরবে কোনও বাংলাদেশি হত্যার ঘটনায় এই প্রথম কারও মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হলো। তবে আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

আবিরনের মৃত্যুতে সৌদি আরবের আদালত দুঃখ প্রকাশ করেছে। ৬ জানুয়ারি এই মামলার সবশেষ শুনানি ছিল। এ সময় আদালত নিহতের পরিবারের দাবি জানতে চাইলে দূতাবাস প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন যে তারা কেসাস চান।

আসামি পক্ষের আইনজীবী গৃহকর্তা বাসেম সালেমির জামিনের আবেদন করলেও আদালত তা নাকচ করে দেন।