ইতিবাচক বার্তা দেওয়া জরুরি: রুহানিকে ম্যার্কেল

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে স্বাক্ষরিত তেহরানের পারমাণবিক চুক্তি বাঁচাতে ইরানের দিক থেকে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া জরুরি। বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে এক ফোনালাপে এমন মন্তব্য করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।

ফোনালাপে ইরান পরমাণু চুক্তি না মানায় জার্মানির উদ্বেগের কথা জানান ম্যার্কেল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকেই চুক্তির শর্তগুলো থেকে ক্রমেই সরে যেতে থাকে তেহরান। অর্থাৎ, ইরান ২০১৫ সালের পরমাণু সমঝোতা আর পুরোপুরি মানছে না। তারা এখন নির্ধারিত সীমার বাইরে গিয়ে ইউরেনিয়াম মজুত করছে।

বিশ্বের অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, ইরান পরমাণু বোমা বানাতে চাইছে। সেজন্য তারা এভাবে ইউরেনিয়াম মজুত করছে। অন্যদিকে হোয়াইট হাউজ থেকে ট্রাম্পের বিদায়ের পর এখন তেহরান চাইছে বাইডেনের নেতৃত্বাধীন নতুন মার্কিন প্রশাসন যেন ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এমন পরিস্থিতিতে রুহানির সঙ্গে ম্যার্কেলের এই ফোনালাপ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

ম্যার্কেল রুহানিকে জানিয়েছেন, ইরান ২০১৫ সালের চুক্তি না মানায় তিনি রীতিমতো উদ্বিগ্ন। যেসব দেশ এই সমঝোতায় স্বাক্ষর করেছিল, তারা চাইছে ইরান যেন সমঝোতা পুরোপুরি মেনে চলে। বিশেষ করে জার্মনি চায়, এই চুক্তি বহাল থাকুক।

২০১৫ সালের চুক্তি অনুসারে, ইরান পরমাণু বোমা বানাতে পারবে না। তাদের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করতে পারবেন আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা। আর ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও ক্রমশ শিথিল করা হবে। কিন্তু ট্রাম্প চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার পর থেকেই বেঁকে বসে তেহরান। তবে জো বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন।

ইরানের প্রেসিডেন্টকে ম্যার্কেল বলেছেন, এখন ইতিবাচক বার্তা দেওয়াটা জরুরি। তাহলেই দুই পক্ষের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। তাই তিনি চান, ইরান পরমাণু চুক্তি মেনে চলুক। চুক্তির বাইরে গিয়ে তারা যেন কিছু না করে।

এই চুক্তি নিয়ে এখন জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে বাইডেন প্রশাসন। কিভাবে এটি বহাল রাখা যায় তা খতিয়ে দেখা হবে।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যারিসে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তারপর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের কথা হবে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও জানিয়েছেন, তিনি এই চুক্তিতে আবার যোগ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে তার আগে ইরানকে পরমাণবিক ক্ষেত্রে কিছু সিদ্ধান্ত বদলাতে হবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা টেলিভিশনে বলেছেন, ‘‌আমরা অনেক ভালো ভালো কথা শুনেছি। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে তার কিছুই হয়নি। বরং তার উল্টোটা করা হয়েছে। প্রতিশ্রুতি ভালো। কিন্তু এবার আমরা অন্য পক্ষের কাছ থেকে আগে কাজ দেখতে চাই। তারপর আমরাও পদক্ষেপ নেবো।

ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন তা প্রত্যাহারের জন্য এক সপ্তাহ সময় দিয়েছে ইরান। অন্যথায় খুব কম সময়ের নোটিসে তাদের পরমাণু কেন্দ্রে সফরের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারির হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সির ডিরেক্টর জেনারেল ইরান সফরে যাচ্ছেন। তিনিও সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবেন। সূত্র: ডিডব্লিউ।