তুর্কি সামরিক ড্রোন কিনতে চায় সৌদি আরব

মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতিতে নিজের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত তুরস্কের কাছ থেকে সামরিক ড্রোন কিনতে চায় সৌদি আরব। মঙ্গলবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান রিয়াদের এমন আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।

২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করা হয়।

দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির এক পর্যায়ে সৌদি আরবে তুর্কি পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়। ২০২০ সালের অক্টোবরে সৌদি চেম্বার অব কমার্সের প্রধান বলেন, আমদানি, বিনিয়োগ ও পর্যটনসহ তুরস্কের সবকিছু বর্জন করা প্রত্যেক সৌদি নাগরিকের দায়িত্ব। এর কিছু দিনের মাথায় সৌদি দোকানপাট থেকে উধাও হয়ে যেতে থাকে তুর্কি পণ্যসামগ্রী। গত নভেম্বরে বিবিসি জানায়, এরদোয়ানকে শায়েস্তার উপায় হিসেবে তুর্কি বাজার বন্ধের কৌশল নিয়েছে রিয়াদ। ব্রিটিশ দৈনিক ফাইনানসিয়াল টাইমস জানায়, তুরস্কের পণ্য আমদানির ওপর অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই তুর্কি সামরিক ড্রোন কেনার ব্যাপারে রিয়াদের আগ্রহের কথা জানা গেলো।

মঙ্গলবার আঙ্কারায় একটি সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরব ও গ্রিসের সাম্প্রতিক যৌথ সামরিক মহড়ার সমালোচনা করেন এরদোয়ান।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, একদিকে তারা গ্রিসের সঙ্গে মহড়া চালাচ্ছে আবার অন্যদিকে তুরস্কের কাছ থেকে আনম্যানড অ্যারিয়েল ভেহিক্যাল (ইউএভি) কেনার আগ্রহের কথা জানাচ্ছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি দেশ তুরস্কের কাছ থেকে সামরিক ড্রোন কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। মূলত সিরিয়া ও লিবিয়ায় এই ড্রোনের কার্যকারিতা এবং বিশেষ করে কারাবাখ যুদ্ধে এর অনন্য ভূমিকার ফলে অনেক দেশই এই ড্রোনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। তুরস্কের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়  কারাবাখের ওই যুদ্ধে আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের জয় পায় আজারবাইজান।

অস্ত্র উৎপাদন ও রফতানিতে তুরস্কের সক্ষমতা

তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুর মতে, তার দেশের প্রতিরক্ষা পণ্যের গুনগত মান ভালো, দামে সুলভ এবং বিক্রির ক্ষেত্রে আগাম কোনও শর্ত আরোপ করা হয় না।

অতীতে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে গিয়ে সমস্যা পড়ে আঙ্কারা নিজেই সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন শুরু করে। ২০২০ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডিফেন্স নিউজ ম্যাগাজিন তাদের টপ গ্লোবাল ফার্মের তালিকায় স্থান দিয়েছিলো তুরস্কের সাতটি প্রতিরক্ষাসামগ্রী উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে। তবে যেটি নিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে, সেটি হলো তুরস্কে বানানো ড্রোন। দেশটির চারটি কোম্পানি ড্রোন উৎপাদন করে থাকে। এগুলোর মধ্যে মেশিনগান এবং গ্রেনেড বহনকারী ড্রোনও রয়েছে।

এছাড়া, নিজস্ব স্যাটেলাইট এবং ভালো মানের রাডার আছে তুরস্কের। এখন তারা ক্রুজ মিসাইল তৈরির কাজ করছে। এর পাশাপাশি নৌ বাহিনীর জন্য তারা যেসব যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরি করছে, তার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি শিপ মিসাইল, লাইটওয়েট টর্পেডো এবং সোনার সিস্টেম। তারা আন্ডারওয়াটার অ্যাটাক ড্রোন তৈরি নিয়েও কাজ করছে। বছর তিনেক আগে শুরু করেছে যুদ্ধজাহাজের ইঞ্জিন তৈরির কাজ। সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা।