কদরের রাতে জেরুজালেমে তাণ্ডব ইসরায়েলি বাহিনীর

ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে শনিবার দ্বিতীয় রাতের মতো নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলে পড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে এদিন আল আকসা মসজিদ এলাকায় মুসল্লিদের ঢল নামে। ইসরায়েলি পুলিশ মসজিদ অভিমুখে মুসল্লিদের বহু বাস আটকে দেওয়ার পরও সেখানে জমায়েত হয় হাজার হাজার মুসল্লি। এক পর্যায়ে তাদের ওপর চড়াও হয় দখলদার বাহিনী।

প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, এদিন ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবে অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে এক বছর বয়সী এক শিশুও রয়েছে। এর আগের দিন শুক্রবার আল আকসা মসজিদ এলাকায় দখলদার বাহিনীর তাণ্ডবে দুই শতাধিক মুসল্লি আহত হয়। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের মুখে আহত হয় ইসরায়েলি বাহিনীর ১৮ সদস্য।

শনিবার ইসরায়েলি পুলিশ মুসল্লিদের ওপর স্টান গ্রেনেড ও জল কামান ব্যবহার করলে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং পুরনো শহরের দামেস্ক গেটের কাছে পুলিশ ব্যারিকেডে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

পবিত্র রমজান মাসে পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদি বসতি স্থাপনের জন্য মুসলিমদের তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ চেষ্টার ঘটনায় এমনিতেই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ২৭ বছরের একজন ফিলিস্তিনি মাহমুদ আল-মারবুয়া রয়টার্সকে বলেন, ‘তারা আমাদের নামাজ পড়তে দিতে চায় না। সেখানে প্রতিদিনই লড়াই করতে হচ্ছে, প্রতিদিনই সহিংসতা হচ্ছে। প্রতিদিনই সেখানে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’

কিছুদিন ধরে শেখ জাররাহ এলাকায় উচ্ছেদের মুখে পড়া পরিবারগুলোর সমর্থনে এলাকাটিতে সমবেত হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। সংহতি জানাতে আসা এসব মানুষদের ওপরও হামলে পড়ে পড়ছে দখলদার বাহিনী। তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস, রাবার কোটেড বুলেট এবং শক গ্রেনেড ব্যবহার করে ইসরায়েলি সীমান্তরক্ষীরা।

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সাম্প্রতিক এই সহিংসতার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, সবার প্রার্থনা করার অধিকার রক্ষার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে তার দেশ। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একে ইসরায়েলের ‘পাপীদের হামলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

সহিংসতার পেছনের কারণ

১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকেই পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। পেশীশক্তির জোরে পুরো শহরকে তারা নিজেদের রাজধানী দাবি করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাতে স্বীকৃতি দেয়নি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা চায়, পূর্ব জেরুজালেম হবে তাদের ভবিষ্যৎ স্বাধীন দেশের রাজধানী।

পূর্ব জেরুজালেমে নিজেদের বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের প্রচেষ্টাকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। যে কোনও ধরনের উচ্ছেদ কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিক্ষোভকারীদের প্রতি সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানোরও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। ফিলিস্তিনিদের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার যে কোনও উদ্যোগের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আরব লিগ। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি।