গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা (ফটো স্টোরি)

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। গত সোমবার থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১২২ জনকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। নিহতদের মধ্যে ৩১ শিশুও রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে কমপক্ষে আরও ৮৩০ জন।

গত কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলে পড়ছে দখলদার বাহিনী। শতাধিক বিমান হামলা চালিয়ে সন্তানসম্ভবা নারী, শিশু, সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। বিমান থেকে একের পর বোমা নিক্ষেপ করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। বোমার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে পুলিশের বিভিন্ন ভবন। এমনকি আবাসিক ভবনেও বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার বাহিনী।দখলদার বাহিনীর হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাজার একটি টাওয়ার বিল্ডিং-এর সামনে এক ফিলিস্তিনি

পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাতে আল আকসা মসজিদের মুসল্লিদের ওপর হামলে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদের দিনও বিমান হামলা থেকে নিস্তার পায়নি গাজার বাসিন্দারা। এক পর্যায়ে বিমান হামলার পাশাপাশি শুরু হয় স্থল অভিযান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি কামান ও ট্যাংক গোলাবর্ষণ শুরু করলে গাজার বহু বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।আল আকসা টেলিভিশনের ব্যুরো অফিস ছিল আল শরোক টাওয়ার নামের একটি ভবনে। ইসরায়েলি বোমার আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া ভবনটির সামনে দুই ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস-ও সাধ্যমতো রকেট হামলা চালিয়ে দখলদার বাহিনীকে পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে। হামাসের শতাধিক রকেট হামলায় এখন পর্যন্ত ছয় ইসরায়েলি এবং দেশটিতে অবস্থানরত এক ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছে। শুক্রবারও ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস যোদ্ধারা।২০১৪ সালের পর এবারই গাজায় সবচেয়ে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে ইসরায়েল

হামাস প্রধান ইসমাঈল হানিয়া বলেছেন, দখলদার বাহিনীর আগ্রাসনের মুখে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে হামাস। ইহুদিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দলের যোদ্ধারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।গাজার আল শরোক টাওয়ারের কাছে ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করছেন একজন ফিলিস্তিনি

তিনি বলেন, দখলদার ইসরায়েল যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে তার ঘৃণ্য অপরাধযজ্ঞ বন্ধ না করবে এবং পবিত্র জেরুজালেম শহর ও আল আকসা মসজিদের ওপর দখলদারিত্বের অবসান না ঘটাবে, ততদিন পর্যন্ত হামাস যোদ্ধারা প্রতিরোধ লড়াই অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষার অধিকার তাদের রয়েছে।দখলদার বাহিনীর হামলায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাওয়া একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা জিনিসপত্র খুঁজছেন এক ব্যক্তি

একদিকে গাজা উপত্যকায় দখলদার বাহিনীর ভয়াবহ তাণ্ডব, অন্যদিকে মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের পাল্টা প্রতিরোধকে ঘিরে পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের আশঙ্কা, পরিস্থিতি পূর্ণাঙ্গ মাত্রার যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুই পক্ষকেই উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।দক্ষিণ গাজার খাঁন ইউনূস শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলার পর বিশাল এলাকাজুড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী তৈরি হয়

জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত টোর ওয়েন্সল্যান্ড বলেছেন দুই পক্ষেই পরিস্থিতি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের দিকে চলে যাচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। তবে ফিলিস্তিনের মানুষেরও নিরাপত্তা ও নিরাপদে থাকার অধিকার রয়েছে।এখন পর্যন্ত ৩১ শিশুসহ অন্তত ১২২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ বলেছেন, তার দেশের হামলা মাত্র শুরু হয়েছে। অন্যদিকে হামাস প্রধান ইসমাঈল হানিয়া বলেছেন, ‘ইসরায়েল যদি বাড়াতে চায় তাহলে আমরা তার জন্য প্রস্তুত। আর তারা থামতে চাইলে আমরা তার জন্যও প্রস্তুত।’ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি ভবনের বাইরে একদল ফিলিস্তিনি

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতি দৃশ্যত সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের দিকে যখন হাজার হাজার রকেট ছুটে যায় তখন তাদেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলেও জানান বাইডেন।ইসরায়েলি বোমার আঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাওয়া ভবনের সামনের রাস্তায় হাঁটছেন এক নারী

হামাস বলছে, ফিলিস্তিনিদের বলপূর্বক তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপনের প্রতিবাদে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে তারা। তবে নিজ বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বাইডেন। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে বিমান হামলায় নারী, শিশুসহ বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি নিয়েও কোনও কথা বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এসব উপেক্ষা করে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষা’র বয়ান হাজির করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর ‘যতক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োজন’ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।দখলদার বাহিনীর হামলায় জ্বলছে গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খাঁন ইউনূস

ফিলিস্তিন ইস্যুতে বরাবরই সোচ্চার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান ইসরায়েলি তাণ্ডবের নিন্দা জানিয়েছেন। বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে এ নিয়ে কথা বলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক ইসরায়েলকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া প্রয়োজন। তাদের এখানে হস্তক্ষেপ করা দরকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ইসরায়েলকে একটা শক্ত শিক্ষা দেওয়া।ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ থেকে বাদ পড়েনি গাজার সন্তানসম্ভবা নারী ও শিশুরাও

ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের কথা বিবেচনা করতেও পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান তুর্কি প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল একে পার্টির ভার্চুয়াল সভায়ও এ নিয়ে কথা বলেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, যারা চুপ থেকে কিংবা প্রকাশ্যে ইসরায়েলি রক্তপাতকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, জেনে রাখা উচিত, একদিন তাদেরও পালা আসবে। সূত্র: আল জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি তাণ্ডবের ভিডিও: