সিরীয় ক্যাম্পে শিকলে বাঁধা-ক্ষুধার্ত শিশুর মৃত্যু

জীবনের শেষ দিনগুলো বাবা এবং সহোদরদের সঙ্গে সিরীয় বাস্তুচ্যুতদের জনাকীর্ণ ক্যাম্পে কাটিয়েছে ছয় বছর বয়সী নাহলা আল-ওথম্যান। ক্যাম্পের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো ঠেকাতে তার বাবা প্রায়ই তাকে শিকলে বেঁধে কিংবা খাঁচায় আটকে রাখতেন। এই অবস্থায় তোলা তার একটি ছবি নেট দুনিয়ায় তোলপাড় ফেলে দিয়েছে।

ক্যাম্পটির সুপারভাইজার হিসাম আলি ওমর বলেন, ‘সারা ক্যাম্পে ঘুরে বেড়ানো আটকাতে তার বাবা তার হাত কিংবা পায়ে শিকলে বেঁধে রাখতেন। আমরা একাধিকবার তাকে শিকল খুলে দিতে কিংবা খাঁচায় আটকে না রাখতে বলেছি, কিন্তু তিনি বরাবরই অস্বীকার করেছেন।’

চরম বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে মে মাসে নাহলার জীবন শেষ হয়। চরম ক্ষুধার্ত অবস্থায় দ্রুত খাওয়ার সময় মারা যায় ছয় বছরের শিশুটি। শিকলে বাঁধা আর খাঁচায় আটকে থাকার ছবিটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। চাপের মুখে তার বাবাকে আটক করতে বাধ্য হয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

ওই খাঁচাটি সিরিয়ার লাখ লাখ শিশুর দুর্ভোগের বিষয়ে মনোযোগ কাড়ে। গৃহযুদ্ধ আর সহিংসতার কবলে পড়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া এই ধরনের লাখ লাখ শিশু সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষুধা আর শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত এসব শিশু চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে বেঁচে থাকতেই সংগ্রাম করছে।

দাতব্য গোষ্ঠী সেভ দ্য চিলড্রেন-এর মুখপাত্র আহমাদ বায়রাম বলেন, ‘আমরা সেইসব শিশুদের নিয়ে কথা বলছি যাদের জন্ম তাঁবুতে, প্রথম বৃষ্টির পর যেগুলো নতুন বিপদ হয়ে ওঠে। তারা ভুলে গেছে স্বাভাবিক জীবন কেমন হয়।’

সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকার ফারজাল্লাহ ক্যাম্পে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতো শিশু নাহলা। ওই এলাকার ৪২ লাখ বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধের সময় এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। আশ্রয় নিয়েছে অস্থায়ী শিবিরে। দাতব্য গোষ্ঠীগুলো বলছে, ক্যাম্পগুলোর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়ে উঠছে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। অনেক শিশুই পরিবারকে সহায়তা দিতে কাজ করছে আর অপুষ্টির হার বাড়ছেই।

সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, উত্তর সিরিয়ান শিশু এবং অল্প বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ছে। মুখপাত্র আহমাদ বায়রাম বলেন, ‘আমরা ১১ বছর কিংবা আরও কম বয়সীদের আত্মহত্যা করতে দেখছি।’