অশ্লীলতার অভিযোগে ইয়েমেনে নারী মডেলের কারাদণ্ড

ইয়েমেনের একজন অভিনেত্রী ও মডেলকে 'অশ্লীলতার' দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির হুথি বিদ্রোহী কর্তৃপক্ষ। ইনতিসার আল-হাম্মাদি নামে ২০ বছর বয়সী ওই মডেলের অভিযোগ, গত ফেব্রুয়ারিতে সানায় বিদ্রোহীদের হাতে আটক হওয়ার পর তাকে শারীরিক ও মৌখিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। সে সময় তিনি চোখ বেঁধে নথিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া আরও তিন নারীকেও কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, মামলাটি নিয়ে ‘অনিয়ম ও অপব্যবহারের’ অভিযোগ রয়েছে।

পশ্চিম ইয়েমেনের বেশিরভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণে থাকা হুথিরা ২০১৫ সাল থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট সমর্থিত সরকারপন্থী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। হুথিদের পরিচালিত বার্তা সংস্থা সাবা জানিয়েছে যে, সানার একটি আদালত হাম্মাদিকে অশ্লীল কর্মকাণ্ড এবং মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে।

এতে বলা হয় যে, তাকে এবং অন্য তিন নারীর মধ্যে একজনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকিদের মধ্যে একজনকে তিন বছর এবং অপর জনকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

খালিদ আল-কামাল নামে ওই চার নারীর আইনজীবী বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে বলেছেন যে, তারা আপিল করবেন।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইয়েমেন বিষয়ক গবেষক আফরাহ নাসের টুইট করেছেন যে, ওই রায় ‘অন্যায় এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ছিল।

ইয়েমেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের তথ্যমন্ত্রী মোয়াম্মার আল-ইরানি লিখেছেন, ‘ইয়েমেনি নারীদের প্রতি সন্ত্রাসী হুথিদের করা হাজার হাজার অপরাধ ও সহিংসতার’ উদাহরণ এই নারীরা।

হাম্মাদির বাবা ইয়েমেনি এবং মা ইথিওপিয়ান। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। দুইটি ইয়েমেনি টিভি সিরিজে অভিনয় করেছেন। মাঝে মাঝে অনলাইনের কিছু ছবিতে তাকে হিজাব ছাড়া দেখা যায় যা রক্ষণশীল মুসলিম দেশটির কঠোর সামাজিক রীতিনীতির লঙ্ঘন।

তার আইনজীবী জুন মাসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছিলেন যে, তিনি সানায় অন্য নারীদের সঙ্গে গাড়িতে করে যাওয়ার সময় হুথি বিদ্রোহীরা তাদের গ্রেফতার করে।

এই আইনজীবী বলেন, ‘তার ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। তার মডেলিং ফটোগুলোকে অশ্লীলতা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। আর এজন্যই হুথিরা তাকে একজন যৌনকর্মী মনে করতো।’

এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, কারাগারে হাম্মাদির সঙ্গে দেখা করতে একদল মানবাধিকারকর্মী এবং একজন আইনজীবী গেলে তাদেরকে তিনি বলেছেন যে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদকারীরা চোখ বেঁধে একটি নথিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছিল। নথিটি বেশ কয়েকটি অপরাধের জন্য একটি ‘স্বীকারোক্তি’ ছিল বলে জানা গেছে। গত মার্চ মাসে হাম্মাদিকে সানার কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে রক্ষীরা তাকে ‘যৌনকর্মী’ এবং ‘দাসী’ বলে গালাগাল করতো। সূত্র: বিবিসি।