ইরানে যে কারণে মানুষের ওপর খেপেছে কুমির

ইরানে চরম পানি সংকট এবং এর ধারাবাহিকতায় দ্রুত প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংকুচিত হওয়ার কারণে কুমিরের খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষুধার্ত প্রাণীগুলো পানির কাছাকাছি আসা মানুষকে শিকার করতে শুরু করেছে অথবা খাদ্য সংকটের জন্য দায়ী মনে করে হামলা চালাচ্ছে।

বৈশ্বিক উষ্ণতার বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে ইরানে। জুলাই মাসে তেল সমৃদ্ধ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান প্রদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। নভেম্বরের শেষ দিকে মধ্যাঞ্চলীয় ইসফাহান শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়ে পুলিশ। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের তুলনায় বালুচিস্তানে পানি সংকট প্রবল। এখানে কয়েক বছর ধরে কুমিরের হামলায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে।

বালুচিস্তান অঞ্চলে কুমিরের হামলায় দুই বছর আগে আহত হয়েছেন সিয়াহক নামের ৬০ বছর বয়সী ব্যক্তি। একটি পুকুরে ভেড়াকে পানি খাওয়ানোর সময় তিনি কুমিরের হামলার শিকার হন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, কুমিরকে আমি দেখতেই পাইনি। কুমিরের মুখে পানির বোতল ছুড়ে ডান হাত মুক্ত করতে পারি।

তিনি জানান, ডান হাতে কামড়ের ফলে রক্তক্ষরণ হয়। অচেতন অবস্থায় অনেকক্ষণ সেখানে পড়ে ছিলেন। তাকে ছাড়াই ভেড়ার পাল বাড়িতে যাওয়ার পর তার খোঁজে আসে মানুষ।

তার মতো অনেকেই কুমিরের হামলার শিকার হয়েছেন। বেশিরভাগ শিশু। ২০১৬ সালে আলিরেজা নামের ৯ বছরের শিশুকে গিলে ফেলে একটি কুমির। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে হাওয়া নামের ১০ বছরের এক মেয়ে ডান হাত হারায়। তাকে প্রায় গিলে ফিলেছিল কুমির। সঙ্গে থাকা ব্যক্তির সাহসিকতায় বেঁচে যায় সে।

ইরান ও ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই কুমিরকে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। ইরানে এই ধরনের কুমিরের সংখ্যা প্রায় ৪০০, যা এই প্রাণীর মোট সংখ্যার ৫ শতাংশ।

ইরানের পরিবেশ অধিদফতর বলছে, কুমির ও স্থানীয় রক্ষার জন্য ভারসাম্য তৈরিতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

কিন্তু গত কয়েক বছর দুঃখজনক ঘটনার পরও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে কোনও সতর্ক বার্তা টানানো নেই। সরকারের কার্যকর উদ্যোগের অভাবে স্বেচ্ছাসেবীরা চেষ্টা করছেন কুমিরগুলোর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে। যাতে তারা খাবারের অভাবে মানুষের ওপর হামলা না চালায়।

এমনই একজন মালেক দিনার। ডোম্বাক এলাকার বাহু-কালাত নদীর তীরবর্তী গ্রামের এই বাসিন্দা কুমিরের জন্য নিজের কলা, কমলা ও আমের বাগান বাদ দিয়েছেন। জানান, এগুলোর জন্য আমাদের বাগান দিতে হয়েছে। নিয়মিত খাবার দিতে হয়। গরমের কারণে ব্যাঙসহ কুমিরের অন্যান্য শিকার এখন আর নেই।