ইরানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর গোয়েন্দা সংস্থার নতুন প্রধান নিয়োগ

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) গোয়েন্দা সংস্থার নতুন কমান্ডার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই গোয়েন্দা সংস্থার আগের প্রধান কেন সরে দাঁড়িয়েছেন তার কোনও কারণ জানানো হয়নি।

আইআরজিসি’র মুখপাত্র রমজান শরিফ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানান, গোয়েন্দা সংস্থার পুরনো প্রধান হোসেইন তায়েবের জায়গায় নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন মোহাম্মদ কাজেমি। এর আগে তিনি আইআরজিসির গোয়েন্দা সুরক্ষা সংস্থা কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স শাখার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

৫৯ বছরের হোসেইন তায়েব আগে ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ক কর্মকর্তা ছিলেন। ২০০০ সালের শেষ দিকে তাকে আইআরজিসিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে তাকে আধাসামরিক বাহিনী বাসিজ অর্গানাইজেশনের প্রধান নিয়োগ করা হয়।

এক বছর পর আইআরজিসি’র গোয়েন্দা শাখা চালু হলে তায়েবকে এর প্রধান করা হয়। বদল করার আগ পর্যন্ত এই দায়িত্বেই ছিলেন তিনি।

তায়েবকে কেন সরানো হলো তা জানাননি আইআরজিসির মুখপাত্র। তবে তিনি শুধু জানিয়েছেন হোসেইন তায়েবকে বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ হোসেইন সালামির একজন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

দুই দিন আগে অনলাইনে গুজব ছড়িয়ে পড়ে হোসেইন তায়েবকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এই বিষয়ে ইরানের কোনও কর্মকর্তা মন্তব্য করেননি। তবে দুই দিনের মাথায় তার পদে বদল আনার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয় তুরস্কে ইসরায়েলি পর্যটকদের খুন কিংবা অপহরণের ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে রয়েছেন আইআরজিসি’র গোয়েন্দা প্রধান হোসেইন তায়েব। এরপরই তাকে বদলের খবর সামনে এসেছে।

এই মাসের শুরুতে ইসরায়েল তাদের ইস্তাম্বুল ভ্রমণের সতর্কতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়েছে। তারা জানিয়েছে, তুরস্কে ছুটি কাটাতে যাওয়া ইসরায়েলি নাগরিকদের খুন কিংবা অপহরণের ষড়যন্ত্র করেছে ইরান।

২০২১ সালের জুলাই মাসে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বেনামি ইরাকি সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে দাবি করেন, তায়েব আইআরজিসি’র এক প্রতিনিধি দল নিয়ে বাগদাদ সফর করেছেন এবং শিয়া মিলিশিয়াদের আমেরিকান লক্ষ্যবস্তু হামলা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

ওয়াশিংটন একতরফাভাবে ২০১৮ সালে বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে ইরানের ২০১৫ সালে সই হওয়া পারমাণবিক চুক্তি ত্যাগ করার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। চুক্তি ছেড়ে যাওয়ার পর ইরানের পর আরোপ করা কঠোর নিষেধাজ্ঞা এখন পর্যন্ত কার্যকর রয়েছে।

২০২০ সালে আইআরজিসি’র প্রভাবশালী কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে মার্কিন সেনাবাহিনী বাগদাদে হত্যা করলে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়।

পারমাণবিক চুক্তি ফের সক্রিয় করতে পরোক্ষ আলোচনা চললেও এখন পর্যন্ত ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। এই চুক্তির মূল বিরোধ বর্তমানে আইআরজিসি’কে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তালিকা থেকে সরানো হবে কিনা তা নিয়ে চলছে।

পরমাণু সমঝোতার তীব্র বিরোধিতাকারী ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের স্থবিরতাও যথেষ্ট খারাপ হয়েছে কারণ গত কয়েক মাসে পরমাণু আলোচনা থমকে গেছে।

গত কয়েক মাসে বেশ কয়েক জন আইআরজিসি কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এসব হত্যাকাণ্ডের সবগুলোর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেনি ইরান। তবে ইরান আইআরজিসি’র কুদস ফোর্সের কমান্ডার কর্নেল হাসান সায়িদ খোদায়িকে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মে মাসের শেষের দিকে তেহরানে গাড়ি চালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন খোদায়ি।

এদিকে বৃহস্পতিবার তেহরানের একটি আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে খুন হওয়া বেশ কয়েক জন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ৪৩০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। আদালতটি জানিয়েছে, এসব হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে মার্কিন সরকার।

সূত্র: আল জাজিরা