ড্রোন উৎপাদনে ইরান সবাইকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্র

সস্তা এবং প্রাণঘাতী ড্রোন উৎপাদনে ইরান সবাইকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে নিজের ড্রোনের ক্ষমতা প্রদর্শনের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করছে তেহরান।

মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্লেষকরা বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। তারা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক ড্রোন নির্মাতা থেকে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সমর্থক হয়ে উঠেছে ইরান। 

পশ্চিমাদের অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র ইরানে তৈরি ড্রোন। তবে ড্রোন সরবরাহের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছে তেহরান।

এমন প্রেক্ষাপটে মার্কিন কর্মকর্তারা কিছু গোপন তথ্য ফাঁস করেছে। এতে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যে বেশ কিছু হামলায় ইরানের তৈরি ড্রোন ব্যবহার হয়েছে। সৌদি আরবের তেল শিল্পে হামলা থেকে ২০২১ সালে মার্সার স্ট্রিট ট্যাঙ্কার হামলা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানের ড্রোন ব্যবহার হয়েছে। এসব ড্রোনের অবশ্য একটিকে নিজেদের বলে স্বীকার করেছে ইরান। আর এই ড্রোনের বৈশিষ্ঠের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যবহার করা ড্রোনের বেশ মিল রয়েছে।  

এই মার্কিন কর্মকর্তাদের একজন তেহরানকে সস্তা এবং অত্যন্ত কার্যকরী ড্রোন উৎপাদনে বিশ্বনেতা হিসেবে আবির্ভূত বলে বর্ণনা করেছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য মস্কোতে ইরানি ড্রোন সরবরাহের বিষয়টিকে অনেক প্রতিবেদনে সত্য বলে বিবেচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি একাধিক মার্কিন প্রতিবেদনে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতার বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। 

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এসব খবরের উদ্দেশ্য হলো ইরানের ড্রোন চালান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে, তার গভীরতা সম্পর্কে বিশ্বকে সতর্ক করা।

রাশিয়াকে তিন মডেলের ড্রোন সরবরাহ করেছে ইরান। সেগুলো হলো, শাহেদ ১৩১ এবং ১৩৬ কামিকাজে ড্রোন। এগুলোকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সস্তা বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে মস্কো। এ ছাড়া মোহাজের-৬ মাল্টি রোল ড্রোনও বেশ কার্যকরী। এগুলোকে সাধাণরত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

 

২০২২ সালের আগস্টে ইরানে একটি সামরিক মহড়ার সময় উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত ড্রোন। ছবি: এপি

 

ইউক্রেন থেকে উদ্ধার হওয়া শাহেদ ১৩৬-এর ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে ২০১৪ সালে ইরানের জাতীয় মহাকাশ প্রদর্শনীতে তোলা ড্রোনের ইঞ্জিনের মিল পেয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, দুই ড্রোনের রিং গিয়ার, স্টার্টার, নিষ্কাশন এবং তাপ সিঙ্ক অভিন্ন।

মার্কিন কর্মকর্তারা এটিকে আবশ্যক প্রমাণ বলে বর্ণনা করছেন। তারা বলছেন, রাশিয়াকে ফের ড্রোন সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মনে হচ্ছে ইরানকে। 

সমর বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য ইরান দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের ড্রোনগুলো শক্তিশালী করেছে। তারা সম্ভবত মনুষ্যবিহীন বিমান তৈরিতেও অনেক এগিয়ে গেছে।

ইরানি ড্রোনের ওপর গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করার কারণ বর্ণনা করে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরানের ড্রোন যে রাশিয়া ব্যবহার করছে, এ বিষয়ে যারা সংশয় আছে, তাদের চোখে খুলে দেয়ার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

রাশিয়াকে ড্রোন সরবরাহে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। তারপরও ইরানকে থামানো যাচ্ছে না। এ ইস্যুতে এবার হয়তো আরও শক্ত পদক্ষেপ নিতে চাইছে দেশ দুটি। আর সে লক্ষ্যেই এসব তথ্য প্রচার করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে তারা।

যদিও ইরানের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড এটাই প্রমাণ করছে যে চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইরানের ড্রোনের বিশাল বাজার রয়েছে। কিছু দিন আগে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাশিয়ায় নতুন ধরনের উন্নত দূরপাল্লার সশস্ত্র ড্রোন পাচার করতে নৌকা এবং একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিমান সংস্থা ব্যবহার করছে ইরান।

রুশ কর্মকর্তারা গত নভেম্বরে তেহরান সফর করেন। সে সফরের পর অন্তত ১৮টি ড্রোন ভ্লাদিমির পুতিনের নৌবাহিনীতে সরবরাহ করা হয়েছিল তেহরান। এসবের মধ্যে ৬টি মোহাজের ড্রোন পছন্দ করে রাশিয়া।   

এদিকে যুক্তরাজ্য সোমবার জাতিসংঘের কাছে প্রমাণ উপস্থাপন করে যে জাতিসংঘের প্রস্তাব লঙ্ঘন করে ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করছে ইরান। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান