সৌদি বাদশাহকে তেহরান সফরের আমন্ত্রণ জানালো ইরান

সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুলআজিজকে ইরান সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এই তথ্য জানিয়েছেন। সৌদি বাদশাহকে ইরান সফরের আমন্ত্রণের বিষয়টিকে দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর দীর্ঘ দিনের বিরোধ অবসানের পর দ্রুত সম্পর্কের উন্নতির লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ খবর জানিয়েছে।

চীনের মধ্যস্থতায় গত মাসে দুই দেশে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের রাজি হওয়ার পর এই আমন্ত্রণ জানানো হলো। এই রাজি হওয়ার মধ্য দিয়ে সৌদি-ইরানের সাত বছরের বৈরিতার অবসান হয়। এই বৈরিতায় তেলসমৃদ্ধ অঞ্চলটির ভূরাজনীতি জটিলতায় পড়েছিল।

সোমবার এক নিয়মিত প্রেস কনফারেন্সে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি সৌদি বাদশাহকে আমন্ত্রণের বিষয়টি জানিয়েছেন।

এই বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সৌদি আরবের কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ইতোমধ্যে সৌদি আরব সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। অবশ্য তার সফরের দিন এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

সৌদি বাদশাহের ইরান সফর হবে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটি বড় ইঙ্গিত। ৮৭ বছর বয়সী বাদশাহ সালমানের স্বাস্থ্য জটিলতা রয়েছে। ২০১৯ সালের পর তিনি সৌদি আরবের বাইরে কোনও কোথাও ভ্রমণ করেননি। তার ছেলে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দেশটি পরিচালনা করছেন।

গত ৪০ বছর ধরে সৌদি-ইরান সম্পর্ক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। ইরানের ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের কোনও সৌদি শাসক তেহরান সফর করেননি। বিপ্লবের মাধ্যমে উৎখাত হওয়া শাসক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির সঙ্গে সৌদি রাজপরিবারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

ইরানের বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া শিয়া মাওলানা রুহুল্লাহ খোমেনি সৌদি আরব ও পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মার্কিন মিত্র শাসকদের উৎখাতের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি সৌদি রাজ পরিবারের সমালোচনা করে ১৯৮৭ ঘোষণা দিয়েছিলেন, মুসলিমদের পবিত্র শহর ‘এক দল ইসলামবিরোধীদের দখলে’ রয়েছে। ওই সময় কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেশ দুটি। পরে ১৯৯১ সালে পুনরায় সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে।

সাবেক সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ যুবরাজ থাকা অবস্থায় ১৯৯৭ সালে তেহরান সফর করেছিলেন। ওই সময় তিনি ছিলেন দেশটির ডি ফ্যাক্টো শাসক। ওই একই বছর তৎকালীন ইরানি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি সৌদি আরবের জেদ্দায় একটি বন্দর সফর করেছিলেন। সেখানে সৌদি বাদশাহ ফাহাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন।

পারস্য উপসাগর দ্বারা বিভক্ত দেশ দুটির নিরাপত্তা ও সম্প্রদায়িক উত্তেজনায় মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব বিস্তারের দিকে নিয়ে যায়। ২০১৬ সালে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে বিক্ষোভকারীদের হামলার পর আবার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেশ দুটি। সৌদি সরকার কর্তৃক এক গুরুত্বপূর্ণ শিয়া ধর্মীয় নেতাকে মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে দূতাবাসে হামলা চালিয়েছিল ইরানিরা।